ড. ইউনূস বলেছেন সরকার পরিচালনার ভুল-ত্রুটি যেন আমরা ধরিয়ে দেই: মাহফুজ আনাম

নির্বাচন কমিশন যেন ভবিষ্যতে সমস্ত নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে জাতির ও ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায় এ রকম একটা সংস্থা চাই।
সরকার পরিচালনার ভুল ধরিয়ে দিতে বললেন ড. ইউনূস
মাহফুজ আনাম | ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

বৈঠক শেষে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, 'আমরা সম্পাদকরা একসঙ্গে হয়েছিলাম। আমরা ড. ইউনূস ও তার সরকারের যে কর্মকাণ্ড, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা চাই বাংলাদেশে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক। একজন সম্পাদক হিসেবে আমি প্রশ্ন উত্থাপন করি, সাংবাদিকদের নিশ্চয়তা ও যত্রতত্র যে খুনের মামলা হচ্ছে সেটা যেন বন্ধ করা হয়। এ ব্যাপারে সরকার যেন সুস্পষ্ট একটি ব্যবস্থা নেয়। সাংবাদিকদের যদি কোনো রকম দোষ থাকে, তারা যদি দুর্নীতিতে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হবে কিন্তু এভাবে যেন না হয়।'

তিনি বলেন, 'আলোচনার মধ্যে এসেছে, আমরা চাই বাংলাদেশে একটি জাতীয় ঐক্য স্থাপিত হোক।'

'আমরা বলেছি, আমরা এই সরকারের কাছ থেকে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো—দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন রিফর্ম করে সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা এবং বিশেষত নির্বাচন কমিশন যেন ভবিষ্যতে সমস্ত নির্বাচন সত্যিকার অর্থে জাতির ও ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায় এ রকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এ রকম একটি দুর্নীতি দমন কমিশন চাই, তারা যেন স্বাধীনভাবে কাজ করে,' বলেন তিনি।

মাহফুজ আনাম আরও বলেন, 'আরেকটি কথা বলেছি, বাসস, বিটিভি ও রেডিও, যেটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হোক। পেশাগতভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।'

মিডিয়া নিষ্পেষণের জন্য যত কালাকানুন যেমন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এ ধরনের সব আইন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, 'অ্যাটলিস্ট এই মুহূর্তে যেন ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এই আইনগুলোতে সাংবাদিকদের নিপীড়নের যে ধারাগুলো আছে এগুলো কার্যকর হবে না এবং এটার রিফর্মটা ওনারা সময় নিয়ে করবেন। এখানে আরও প্রস্তাব এসেছে যে, কনস্টিটিউশনাল রিফর্ম—এখানে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন, এর জন্য একটি গ্রুপ করে দিয়ে বা কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের পরিবর্তন জুডিশিয়ারির ইনডিপেনডেন্স, পুলিশ রিফর্ম, এগুলোর সব কিছু একটি গ্রুপের কাছে বা বিভিন্নভাবে হতে পারে। অর্থাৎ আমরা এগুলোর পরিবর্তন চাই, গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।'

'ড. ইউনূস আমাদের বলেছেন যে, উনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন এবং আমাদের কাছে উনার বিশেষ আবেদন হচ্ছে, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা, বিভিন্ন পরামর্শ সাগ্রহে গ্রহণ করেছেন এবং আমাদের আহ্বান করেছেন যে, এই সরকার পরিচালনার সব ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি যেন আমরা ধরিয়ে দিই। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উনি বলেছেন, এই সরকারের ভুল-ত্রুটি হলে আমরা যেন নির্দ্বিধায় সেটা কাগজে ছাপি এবং এই সরকারকে সাহায্য করি,' বলেন মাহফুজ আনাম।

তিনি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করছি, উনি সত্যিকার অর্থে ভাইব্র্যান্ট মিডিয়া চান। সত্যিকার অর্থে উনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। মিডিয়াবান্ধব সরকারপ্রধান যদি আমরা কখনো পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। এ জন্য আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।'

মাহফুজ আনাম বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন থাকবে, এটা আমাদের কাছে উনি জিজ্ঞাসা করেছেন। এটা নিয়ে অনেকেই মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। কিন্তু মূল কথা যেটা আসছে, সেটা হলো এই সরকারের এজেন্ডা কী? সেই অনুপাতে সময়। অনেক রাজনৈতিক দল বলেছে আপনাদের যতদিন লাগে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলেছে যৌক্তিক সময়, এগুলো তো অস্পষ্ট। উনার ইচ্ছা যে, আমরা খবর কাগজ-টেলিভিশনের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে উনাকে একটি ধারণা দিই যে, জাতি কী চায়, কত বছর হতে পারে দুই-তিন-পাঁচ বছর। এটা নিয়ে উনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই, উনি চান জনতার চিন্তা জানতে। সে ব্যাপারে উনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন, আমরা যেন জনগণের কথা লিখি এবং উনাকে জানাই যে কত দিন।'

তিনি বলেন, 'উনার ধারণা হচ্ছে, পৃথিবী এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা অনেক উৎসুক এই পরিবর্তনে এবং তারা চায় বাংলাদেশকে তারা যেভাবে পারে সাহায্য করতে। এটা আমাদের জন্য একটি বড় সৌভাগ্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

6h ago