বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি চায় ৩ ব্যাংক

‘এই তিন ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করেছে। তাদের আবেদন এখনো অনুমোদিত হয়নি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গ্যারান্টি আবেদন
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে তিন মাসের জন্য ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকার সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

পুনর্গঠিত ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সহায়তা হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি চায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই তিন ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করেছে। তাদের আবেদন এখনো অনুমোদিত হয়নি।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমরা ওই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব। এই বিষয়ে পরিপত্রের পরে গ্যারান্টির জন্য আবেদন ফর্ম পরিবর্তন করা হবে।'

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে রুগ্ন ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা করবে বলে ইঙ্গিত দিলে পুনর্গঠিত এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।'

এই তিন ব্যাংক ছাড়াও ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি পুনর্গঠিত ব্যাংকও তারল্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গত ২০ আগস্ট ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেন।

পরে, ব্যবসায়ী ও বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারল্য সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও তৌহিদুল আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্যারান্টির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছি। এখনো অনুমোদন পাইনি। তারল্য সহায়তা চেয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কাছেও আবেদন করেছি। তারাও এখনো অনুমোদন দেয়নি।'

গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চাওয়ার পর গ্যারান্টির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে।

আবেদনে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেছেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। গ্রাহককে টাকা দিতে সমস্যা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তিন মাসের জন্য তারল্য সহায়তা পেতে থেকে সোনালী ব্যাংকের কাছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি।'

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ডেইলি স্টার মনিরুল মওলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

অপর পুনর্গঠিত ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক তারল্য সহায়তা হিসেবে ৭০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আবেদন করেছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারল্য সহায়তার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আবেদন করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি গ্যারান্টি দেয় তবে প্রয়োজনীয় তারল্য পাওয়া যাবে।'

ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের আধিপত্য থাকলেও সম্প্রতি সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago