আন্তর্জাতিক গবেষণা

বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত ১০ নদীর ৪টির নিরাপদ প্রবাহ পথ নষ্ট হয়েছে

দখল-দূষণে মরছে নদী
হালদা নদী। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ বদ্বীপের ১০টি নদীর মধ্যে চারটি তার নিরাপদ প্রবাহ পথ (সেফ অপারেটিং স্পেস-এসওএস) অতিক্রম করেছে, যে কারণে বেশির ভাগ নদীর প্রবাহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাকি ছয়টি নদীর বিষয়েও সতর্ক করেছেন গবেষকরা।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রিভারাইন পিপল যৌথভাবে এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে।

গতকাল বুধবার গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে 'স্টাডি টু এনহ্যান্স ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স ইন দ্য বাংলাদেশ ডেল্টা' শিরোনামে এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বদ্বীপের প্রধান নদীগুলোর নিরাপদ প্রবাহ পথ সংজ্ঞায়িত করার এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক গবেষণা, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বদ্বীপগুলোর একটির স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই গবেষণার মূল্যবান বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত আন্তঃসীমান্ত পানি সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও নীতিমালা সম্পর্কে জানাবে এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অবদান রাখবে।

জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারসে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর স্কুল অব সোশ্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটির গবেষক ড. মো. সারোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এসডিজি অর্জনের জন্য সব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) পানির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ পানির ঘাটতিতে থাকেন, যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে, যা বৃহত্তম, সর্বাধিক জনবহুল এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ বদ্বীপগুলোর একটি।'

'যদিও বাংলাদেশকে নদীর দেশ বলা হয়, তবে বাংলাদেশের নদীগুলোর আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি মূলত পানি নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও বেড়েছে। অতএব পানি নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলোকে না উৎরাতে পারলে এবং আন্তঃসীমান্ত পানি বিরোধ মীমাংসা না করলে বাংলাদেশ বদ্বীপে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। যা এখন খুব প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।

গবেষণায় বাংলাদেশ বদ্বীপের সামাজিক-বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থায় নিরাপদ প্রবাহ পথের মধ্যে নদী প্রবাহ বজায় রাখার জন্য ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত চুক্তি, পরিবেশগত পুনরুদ্ধার এবং প্রযুক্তিগত সমাধানগুলোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া, এতে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়া সত্ত্বেও গঙ্গা নদীর নিরাপদ প্রবাহ পথ বজায় রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোও প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি নদীর প্রবাহ তার নিরাপদ প্রবাহ পথ অতিক্রম করেছে, যা চিহ্নিত করে যে, বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা এবং চুক্তিগুলো পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট নয়।

আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবাহের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা মোকাবিলায় মেকং নদী কমিশন ও সিন্ধু জল চুক্তির মতো সাফল্যের গল্পগুলো গঙ্গা নদীর জন্য নেপাল এবং যমুনা নদীর জন্য চীন ও ভুটানসহ ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক চুক্তির জন্য গৃহীত হতে পারে বলে গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt accepted demands of JnU protesters: UGC chairman

University Grants Commission Chairman Prof SMA Faiz today said the government has accepted the demands of the protesting Jagannath University students

7m ago