কম আয়ের প্রতি ১০ পরিবারের ৬টি পুষ্টি চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে

কম আয়ের প্রতি ১০ পরিবারের ৬টি পুষ্টি চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে
ফাইল ফটো | ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও আগস্ট মাসে দেশের কম আয়ের প্রায় ৩৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

'র‌্যাপিড মার্কেট মনিটর' শিরোনামে ডব্লিউএফপির গবেষণায় উঠে এসেছে, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যবসা ব্যাহত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক এক শতাংশে ছুঁয়েছিল।

এ ছাড়া, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার কারণে গত জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে খাদ্য নিরাপত্তার অবনতি হয়েছে।

'খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায়ন পর্যবেক্ষণ' শীর্ষক ডব্লিউএফপির আরেক প্রতিবেদন অনুসারে, গত আগস্টে প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারেনি।

কম আয়ের পরিবারের কথা বিবেচনা করলে, প্রতি ১০টি পরিবারে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়টিতে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৫৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা ৫২ টাকায় নেমে আসে।

তবুও, দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি ছিল। তাই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের শুরুর দিকে গমের আটা, মসুর ডাল, ডিম ও সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দামের অবস্থায় একই দেখা গেছে।

সরকার পরিবর্তনের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও এখনো তা ১০ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে—ভোক্তা মূল্য সূচক আগস্টে কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। যা এর আগের মাসে ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ ছাড়া, আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি টানা ১৮ মাস জন্য নয় শতাংশের বেশি ছিল।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার সব আয়ের মানুষের মধ্যে কম। পরিবারগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের খাবারে আয়রন ও আমিষের পরিমাণ কম।

বেশির ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলো খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবিলায় কৌশল অবলম্বন করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  প্রতি ১০ জনের সাতজন জমানো টাকা খরচ করছে বা সম্পত্তি বিক্রি করেছে। খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হওয়া অনেক পরিবার হয় ঋণ করেছে বা সঞ্চয় থেকে খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবার মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সুযোগ কমেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীপ্রধান পরিবার ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি দরিদ্র পরিবারগুলোর খাবার ও চিকিৎসা আরও কঠিন করে তুলেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ২০ জেলায় প্রায় চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাত হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে ১৮ জনের মৃত্যু ও দুই হাজার ৫০৩ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য খাত, সড়ক ও আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মাছের ঘেরের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ২৪২ কোটি টাকা। সড়কের ক্ষতি প্রায় এক হাজার ১২ কোটি ও ঘর-বাড়ির ক্ষতি দুই হাজার ৫২ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসার সময় বাড়ানো সত্ত্বেও বেচাকেনার পরিমাণ এখনো কারফিউয়ের আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। সম্ভবত বেশিরভাগ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি নানা কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।'

'দীর্ঘদিন ধরে দেশে দুই অংকের মূল্যস্ফীতি চলছে। ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, কম আয়ের মানুষের আয় এতটাই কমে গেছে যে, তাদের খাবার কম কিনতে হচ্ছে।

সমস্যা সমাধানে খোলাবাজারে বিক্রি ও টিসিবির ভর্তুকি দেওয়া খাবারে সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

তার ভাষ্য, সুবিধাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা উচিত। পূর্ববর্তী সরকার যে তালিকা তৈরি করেছিল, তা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেটি ছিল রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।

'তা না হলে দেশে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে' এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi Migrant Workers Deaths Over The Years

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

9h ago