রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে অচলবস্থা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাশিয়ার ঋণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এসক্রো অ্যাকাউন্ট,
ফাইল ছবি, সংগৃহীত

রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসক্রো অ্যাকাউন্টে ৮০৯ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে।

এসক্রো হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে তৃতীয় পক্ষ অস্থায়ীভাবে লেনদেনের অর্থ জমা রাখে। অর্থাৎ, লেনদেনের অর্থ ও সম্পদ তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। তারপর চুক্তির সব শর্ত পূরণ হলেই তা সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

মূলত ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তাই রাশিয়ার ঋণ ও সুদ পরিশোধের অর্থ বিশেষ অ্যাকাউন্টে (এসক্রো) জমা দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্তত দশটি রুশ ব্যাংক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেম ব্যবহারে নিষিদ্ধ হয়। সুইফট মূলত মেসেজিং নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টে এক বিলিয়ন ডলারের তিন-চতুর্থাংশের বেশি জমা পড়েছে। ভবিষ্যতে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার এ তথ্য জানতে পেরেছে।

এর আগে, ২০১৬ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে রাজি হয়েছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সুদের পাশাপাশি দশ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের কথা থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন স্থবির হয়ে আছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে মূল টাকা পরিশোধ শুরু হবে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মেয়াদ ২০২৯ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের অংশীদাররা রাশিয়াকে কীভাবে অর্থ পাঠানো যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। বিকল্প উপায়ের দিকেও নজর আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।'

'গত বছর থেকে আমরা অর্থ পরিশোধের জন্য ঝুঁকি ও ঝামেলা-মুক্ত উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি,' বলেন তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হলে তারা কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

তার ভাষ্য, 'রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে প্রায় আট থেকে নয়টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে।'

রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংক ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের জন্য ঋণ বিতরণ শুরু করে।

এদিকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার রূপপুরে পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিগত সরকারের করা মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ চুক্তি পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইআরডি কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, চীনের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া। এই প্রস্তাবের সম্ভাবত্য যাচাই করা হচ্ছে।

প্রকল্পে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট বাংলাদেশি মুদ্রায় পেমেন্ট পেতে সম্মত হওয়ার পর সরকার প্রকল্পের জন্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রায় আংশিক অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

3h ago