দুই অঙ্কে ব্যাংক সুদহারে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

সুদহার
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ব্যাংক ঋণের সুদহার দুই অঙ্কে পৌঁছে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। কারণ, এটি ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দেবে। মুনাফায় প্রভাব ফেলবে।

গতকাল শনিবার ব্যবসায়ী নেতারা এই উদ্বেগের কথা জানান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'এমন দেশ নেই যেখানে ব্যবসায়ীরা দুই অঙ্কের ব্যাংক সুদহারে মুনাফা করতে পারেন। দেশে এখন সুদের হার ১৪ শতাংশ।'

ডিসিসিআই আয়োজিত 'কারেন্ট স্টেট অব দ্য ইকোনমি অ্যান্ড আউটলুক অব বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

'কয়েকজনের অপকর্মের জন্য সব ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, 'বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনের সঙ্গে পণ্যের মান, ভাবমূর্তি ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এই মুহূর্তে আসবে না।'

সরকারি প্রশাসন পুরোপুরি সচল না হওয়ায় অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী নন। ফলে কর্মসংস্থান কমে গেছে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, 'কোনো দেশই কেবল দাতাদের আর্থিক সহায়তায় চলতে পারে না। অর্থনীতির বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্যকে সচল রাখতে হবে।'

শিল্পাঞ্চলে সহিংসতা রোধ ও শিল্প পুলিশের কৌশলগত মোতায়েনের দিকে মনোযোগ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো আস্থা তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন।

'সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। গত ১০ বছরে কোনো ব্যবসায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তাদের মনের কথা বলতে পারেননি।'

ব্যাংক ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রকৃত সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি।'

তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ দেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এটি ব্যবসায়ীদের উপকারে আসে না।

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, তিনি এখন ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে কাজ করছেন।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের কথার প্রতিধ্বনি করে তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।'

শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ প্রসঙ্গে তার অভিযোগ, বহিরাগতরা এতে প্ররোচনা দিয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'কর্মসংস্থান ব্যবসায়ীদের নৈতিক দায়িত্ব। শিল্পের বিকাশে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে।'

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'বিগত সরকারের আমলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রভাবিত হয়েছিল।'

শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা ফিরলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এম মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতের দিকে অনেক নজর দিলেও অন্যান্য খাতের দিকে এখনো সেভাবে নজর দেয়নি।'

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, 'ব্যবসায়ীরা এখনো মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি।'

'বর্তমানে ব্যবসায়ীরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যেতে পারে। অন্যদের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপে জাতীয় পর্যায়ে সমাধান প্রয়োজন।'

আশরাফ আহমেদ বলেন, 'কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাট ব্যবসায়ীদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।'

'আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তারা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার মতো তৎপর নয়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'শিল্প পুলিশ মানসিকভাবে পুরোপুরি ফিরে আসেনি বা আগের মতো আস্থা ফিরে পায়নি। তাই তাদের জোরালো ভূমিকায় দেরি হচ্ছে।'

তিনি মনে করেন, কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়ছে। ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকা না পাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এবং ফুডপান্ডার সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও আমব্রিন রেজা।

Comments

The Daily Star  | English
NID cards of Sheikh Hasina and family locked

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

1h ago