পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি সংস্কার দাবি

ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির যে বিষয়গুলো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ক্ষুণ্ন করে, সেগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় বক্তারা এই দাবি জানান।

মাওরুম জার্নাল ও আদিবাসীদের জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম আইপিনিউজ যৌথভাবে 'মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সংবিধান দর্শন: জুলাই গণঅভ্যুত্থান, রাষ্ট্র সংস্কার ও আদিবাসী জাতিসমূহের অংশীদারত্ব' শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

পার্থ বলেন, 'মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রীয় পরিচয় অবশ্যই সকল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মর্যাদা দেওয়া হবে।'

মাওরুম জার্নালের সম্পাদক ও মানবাধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা যে আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়ছি, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৭২ সালে গণপরিষদ বিতর্কে একাই লড়াই করেছিলেন। তিনি কাঠামোগতভাবে সংবিধানকে প্রশ্ন করেছেন। তিনি বহুত্ববাদের চিন্তা করেছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয় নির্ধারণে আলোচনা হওয়া উচিত মন্তব্য করে আমেনা মহসিন বলেন, 'রাষ্ট্র যে বাঙালি আধিপত্যবাদের ভিত্তিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়ন করে, সেই একই আধিপত্যবাদ পাহাড়ে চলতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি, ১৯০০ সালের যে বিষয়গুলো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ক্ষুণ্ন করে সেগুলো সংস্কার করা দরকার। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসব বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক, সেগুলোর বিষয়েও কাজ করা জরুরি। মেজরিট্যারায়ন ডেমোক্রেসিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে ডেমোক্রেসি সম্ভব কি না তা বিচার বিশ্লেষণ করে কীভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে।'

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'ফ্যাসিবাদী সরকার মাত্র ৩৬ দিনে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ৩০ হাজার মানুষকে হতাহত করেছে এবং প্রায় চার হাজার মানুষকে অন্ধ করা হয়েছে। যেটা এ দেশের বিগত স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনের সময়ও হয়নি।'

তিনি বলেন, 'আমরা এখন যে অন্তর্ভুক্তির কথা বলছি, সেই অন্তর্ভুক্তিতে সব শ্রেণির মানুষদের কথা বলতে হবে। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু আমরা এখন কী দেখছি? আমরা দেখছি রাষ্ট্র সংস্কারে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে, পাহাড়ি আদিবাসীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।'

'এই সংবিধান একটি সামন্তবাদী সংবিধান। যে সংবিধানকে ভেঙে এম এন লারমা, সন্তু লারমারা বের হয়ে আসতে চেয়েছেন। এই সংবিধান কেবল মুসলমানের, এই সংবিধানে অন্য ধর্মের স্বীকৃতি নেই। এই সংবিধান কেবল বাঙালির, অন্য কোনো জাতির স্থান দেওয়া হয়নি। দেশের সংবিধানে, রাষ্ট্র সিস্টেমে বহুত্ববাদের স্থান দেওয়া হয়নি। অথচ বাংলাদেশ একটি বহুভাষা, বহুজাতির, বহু সংস্কৃতির দেশ। আমরা যে বহুত্ববাদী সংবিধানের কথা বলি, সেই বহুত্ববাদী সংবিধান হতে গেলে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সমাজ দর্শনকে গুরুত্ব দিতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

মাহমুদুল সুমন বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশ্নে আমরা সব সময় উপনিবেশিক চশমা দিয়ে দেখি। তিনি এ চশমাটি খুলে আদিবাসীরাও যে দেশের গর্বিত নাগরিক, তাদের যে অধিকার রয়েছে, সেই অধিকার সুরক্ষা করতে হবে। আজকের নতুন বাংলাদেশে আমরা এথনিসিটি নির্ধারণ করার সুযোগ পেয়েছি। সুতরাং, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, দেশের সমতল অঞ্চলেও যে সমস্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে।'

সামান্তা শারমিন বলেন, 'আমরা যে এক দফার ভিত্তিতে আন্দোলন করেছিলাম সেটি এখনো সফল হয়নি। তবে এ আন্দোলনের ফলে নতুন করে প্রশ্ন করার সুযোগ এসেছে, আলাপ-আলোচনার সুযোগ এসেছে। আমাদের সংবিধান একটি অভিশপ্ত সংবিধানে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নাগরিক মর্যাদাকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় কিন্তু আমাদের দেশের সংবিধান এটি করতে ব্যর্থ। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংবিধানকে জনমুখী করতে হবে।'

অনিক রায় বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা। সারা দেশে একই ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো একটা অঞ্চলকে একটি নির্দিষ্ট বাহিনী কর্তৃক শাসন ও শোষণে রেখে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব না।'

সভা সঞ্চালনা করেন আইপিনিউজের উপসম্পাদক সতেজ চাকমা।

উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, কবি ও লেখক মিঠুন রাকসাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও সাংবাদিক অনিক রায়, আইনজীবী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সায়ক চাকমা।

Comments

The Daily Star  | English

Enquiry panel to find reasons for stock market downtrend

The four-member committee will submit a report in 10 workdays

39m ago