নির্বাচনের আগে সংস্কার: আশাবাদী হলেও সতর্ক বিএনপি

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন দিতে দেরি হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে জনগণ সংস্কার চায় বলে তারা নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে ফেলতেও চাচ্ছে না।
ছবি: সংগৃহীত

বিরোধী দল হিসেবে দীর্ঘ ১৫ বছর অত্যন্ত কঠিন সময় কাটিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার চায় বিএনপি।

ব্যাপক সংস্কার নিয়ে সংশয় রয়েছে দলটি। কেননা, এর জন্য নির্বাচন আয়োজনে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাদের আশংকা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এজেন্ডায় থাকা ব্যাপক সংস্কারের একটি কারণ হতে পারে এই সরকারের সময়কে দীর্ঘায়িত করা।

বিএনপি নেতারা বিশ্বাস করেন, প্রশাসনে এখনো আগের সরকারের লোকজন রয়ে গেছে, যারা দ্রুত সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করবে।

বিএনপি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে গেলেও বেশ সতর্ক অবস্থানেই রয়েছে। কারণ, এখন পর্যন্ত তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ার হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহারে কোনো তৎপরতা দেখতে পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'জাতি যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা বিভ্রান্ত। তাদের ওপর বিশাল দায়িত্ব। কিন্তু তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গণতন্ত্রে উত্তরণ করতে সক্ষম বলে মনে হয় না।'

এই নেতা আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আরেকটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে এবং সেটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য বিপজ্জনক হবে।'

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য ও ভোটার তালিকা তৈরি হলেই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আন্তরিক হলে ১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করা সম্ভব।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রেখে নির্বাচনে যাবে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'যদি কোনো কারণে দলগুলো একমত হতে না পারে, তাহলে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।'

তার মতে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে বেশি সময় লাগবে না। তবে সাংবিধানিক সংস্কার জটিল হতে পারে।

সংবিধান সংস্কার সম্পর্কে তারা বলেন, সরকার কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে চায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

সংস্কার কমিশনগুলোকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে এবং বিএনপি নেতারা বলছেন, এই সময়সীমা যৌক্তিক। তবে সময় পেরিয়ে গেলে সমস্যা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশকে স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের জন্য দেশের মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ম্যান্ডেট হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু তারা যদি মনে করে যে এই জমিনের সবকিছু সংস্কার করার জন্য তাদের ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে, তাহলে তাদের ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে। এটি তাদের জন্য ভুল হবে। শিক্ষার্থী ও গণমানুষ তাদের এমন ম্যান্ডেট দেয়নি।'

বিএনপি নেতারা বারবার বলছেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে, কিন্তু নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায়। তারা বলেছে, সরকারকে অবশ্যই এটি পরিষ্কার করতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সংস্কার কমিটিগুলোকে সুপারিশ করার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এটা যৌক্তিক। কাজেই আমরা এটাকে সমর্থন করছি।'

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন দিতে দেরি হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে জনগণ সংস্কার চায় বলে তারা নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে ফেলতেও চাচ্ছে না।

Comments