দেশে স্টারলিংকসহ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের দরজা খুলছে

স্টারলিংক
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যে খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করেছে তাতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্সের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফলে, ইলন মাস্কের স্টারলিংকসহ এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার পথ খুলছে।

'বাংলাদেশে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রণীত খসড়া রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং গাইডলাইনস' শিরোনামে এই নির্দেশিকা তৈরি হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ১০০ শতাংশ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশি অংশীদারিত্ব, যৌথ উদ্যোগ বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থাটিকে সরকারের এফডিআই নীতি অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও অন্যান্য সংস্থার সব নিয়ম, প্রবিধান ও নির্দেশাবলীও প্রযোজ্য হবে।

২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে স্টারলিংক। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বিটিআরসি ও বিডাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার এক সপ্তাহ পর এই নির্দেশিকা এলো।

নির্দেশিকা অনুসারে, লাইসেন্সের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা দিতে পারবে সেগুলো হলো—ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (দেশীয় ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অব থিংস ও মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগ, গতি পরিষেবায় আর্থ স্টেশন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং বা আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা ও বিটিআরসি অনুমোদিত অন্যান্য পরিষেবা।

এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি বাসায়, সম্প্রচারে, স্যাটেলাইট আইএমটিভিত্তিক পরিষেবা বা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা দিতে পারবে না।

এই নিবন্ধন নিতে আবেদন বা প্রসেসিং ফি ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে অধিগ্রহণ ফি হবে ১০ হাজার ডলার ও বার্ষিক ফি হবে ৫০ হাজার ডলার। এ ছাড়া, টার্মিনাল প্রতি বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি দিতে হবে ২০ ডলার করে।

লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের সাড়ে পাঁচ শতাংশ দিতে হবে বিটিআরসিকে। মোট রাজস্বের আরও এক শতাংশ 'মহাকাশশিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা'র অংশ হিসেবে দিতে হবে।

লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সেবা দেওয়া শুরুর আগে বাংলাদেশের মধ্যে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। তবে বিটিআরসি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অতিরিক্ত গেটওয়ে স্থাপনে উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে স্থাপন করা যেকোনো ব্যবহারকারীর টার্মিনাল অবশ্যই স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে প্রমাণীকৃত ও পরিবেশিত হতে হবে।

এনজিএসও গেটওয়ে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্রাফিক পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

এনজিএসও স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে স্থির নয়। সেগুলো কৃত্রিম উপগ্রহের চেয়ে কম উচ্চতায় এবং দ্রুত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।

বিশ্ববাজারে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় স্পেসএক্স ৬০টিরও বেশি দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় চার হাজার ৫১৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে আছে।

ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ওয়ানওয়েব মহাকাশে কয়েক শ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও এই সেবাখাতে বিনিয়োগ করেছেন। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট দিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিন হাজার ২০০টিরও বেশি স্যাটেলাইট চালুর পরিকল্পনা তার আছে।

তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তির সেবা নেওয়া খুবই ব্যয়বহুল হবে।

স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, এই প্রতিষ্ঠানের সেবা বাসায় নিতে প্রতিমাসে প্রায় ১২০ ডলার দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ৩৫০ থেকে ৫৯৯ ডলার খরচ করতে হবে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার স্থাপন করতে।

বাংলাদেশের স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকায় পাঁচ এমবিপিএস গতির ব্রডব্যান্ড সেবা দিয়ে থাকে। মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ৩০ জিবি ডেটার জন্য খরচ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা (প্রায় চার ডলার)।

টেলিকমনীতি বিশ্লেষক মুস্তাফা মাহমুদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এনজিএসও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দেশে চালু হলে বড় পরিবর্তন দেখা যাবে।

তিনি আরও বলেন, 'প্রত্যন্ত, অনুন্নত এলাকায় সংযোগ দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা উপকার পাবে, ব্যবসা বাড়বে ও মানুষের যোগাযোগ আরও গতিশীল হবে।'

তার মতে, 'এর জন্য আমলাতান্ত্রিক বাধা কমাতে হবে। সাশ্রয়ী দামে সেবা দিতে হবে। বিটিআরসি এখানে কাজ করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Scuffles in Los Angeles as soldiers sent by Trump fan out

Unrest broke out for a third day, with protesters angry at action by immigration officials that has resulted in dozens of arrests of what authorities say are illegal migrants and gang members

52m ago