মূল্যস্ফীতি: দামি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের কাটতি কম

ইলেকট্রনিক্স পণ্য
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে বেশিরভাগ ক্রেতা কম দামের পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে, মাঝারি থেকে বেশি দামের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা অনেক কমেছে।

এ ছাড়াও, টাকার দাম বারবার কমে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতারা মিতব্যয়ী হচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই দেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

বেশিরভাগ ক্রেতাই ইলেকট্রনিক্স পণ্যের জন্য তুলনামূলক কম দামের ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

চরম মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা সুদের হার বাড়ালেও ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ১০ শতাংশের আশেপাশে আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে সিপিআই দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৯২ শতাংশ। এর আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস রিতেশ রঞ্জন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রেতারা স্থানীয় ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কম দামের টেলিভিশন বিক্রি তিন থেকে চার শতাংশ বেড়েছে।'

ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ২২ থেকে ২৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় গত জুলাইয়ের পর চার মাসে দামি টেলিভিশন বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।

একইভাবে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সার্বিক বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে।

রিতেশ রঞ্জন জানান, শুধুমাত্র টাকার দাম কমে যাওয়া কারণে বিদেশি ব্র্যান্ডের টিভি, ফ্রিজ ও অন্যান্য পণ্যের যন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক গড়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'এই দাম বৃদ্ধির চাপ ক্রেতাদের ওপর পড়ছে। এই কারণে দামি টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও মাইক্রোওয়েভের চাহিদাও কমেছে।'

তার মতে, বাজারে এক লাখ টাকার কম দামে কোনো ভালোমানের ফ্রিজ পাওয়া যায় না। আগে যে ফ্রিজের দাম ছিল ৮০ হাজার টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়।

তিনি জানান, গত দুই মাস ধরে বাজার পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এসি বিক্রি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

ট্রান্সকম এসিতে ২০ শতাংশ, ফ্রিজে ১৭ শতাংশ ও টিভিতে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে।

এমনকি ক্রেতারা ৩৬ মাসিক কিস্তির সুবিধাও পাচ্ছেন।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) গালিব বিন মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা ও উৎপাদকরা হিমশিম খাচ্ছেন।'

তার প্রতিষ্ঠান সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'শুরু থেকেই আমরা সব পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।'

তার মতে, ওয়ালটন প্রতিযোগিতামূলক দামে মাঝারি ও বেশি দামের পণ্য তৈরি করে।

'ক্রেতারা যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন পণ্য পাচ্ছেন তাই তারা বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় দেশীয় ব্র্যান্ডকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন,' বলে মন্তব্য করেন গালিব বিন মোহাম্মদ।

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. মেসবাহউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে বাজারে ক্রেতা সংকট থাকায় এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন।'

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স দেশে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ বহুজাতিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে।

তিনি বলেন, '২০২৩ সালের প্রথম দিকে এই শিল্পের দুর্ভোগ শুরু হয়। ডলারের বাড়তি দামের কারণে উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পের দুর্ভোগ এখনো চলছে।'

এ ছাড়াও, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার কারণে ক্রেতাদের কেনাকাটায় মন নেই।

তিনি মনে করেন, 'কেউই জানেন না ভবিষ্যতে কী হতে পারে। এ কারণে মানুষ দামি পণ্য কিনছেন না।'

ইলেক্ট্রো মার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফসার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত জুলাই থেকে বিক্রি অনেক কমেছে। পরিচালন খরচ মেটানোই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। আগামীতে বাজার কেমন হবে তা ধারণা করাও কঠিন।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago