পাসপোর্ট পেতে আঙুলের ছাপ দিয়েছেন সাবেক স্পিকার, পুলিশ বলছে পলাতক
একটি হত্যা মামলায় ফেরার এবং পুলিশ তাকে খুঁজছে। অথচ আত্মগোপনে থেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন।
'আত্মগোপনে' থেকেই তিনি কর্মচারীদের কাছে তার আঙুলের ছাপ এবং আইরিশ দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মচারীরা যদি শিরীন শারমিনের সন্ধান পেয়ে থাকেন, তাহলে পুলিশ কেন পাচ্ছে না? এর জবাবে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি এবং আমরা তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছি।'
পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের আঙুলের ছাপ নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে কি না জানতে চাইলে সরাসরি কোনো জবাব দেননি মজিদ। তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় রয়েছে।'
গত ২৭ আগস্ট স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে শিরীন শারমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রংপুর শহরের পূর্ব গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার (৩২) মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরের সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সদস্যরা সে সময় এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে মুসলিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার উপদেষ্টা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট বাতিল করে।
সাবেক স্পিকার তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গত ৩ অক্টোবর ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ১০ অক্টোবর তাদের আঙুলের ছাপ ও আইরিশ ছবি জমা দেওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, বাড়িতে বসেই তারা আঙুলের ছাপ ও আইরিশ দিয়েছেন।
পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানিয়েছে, আবেদনপত্রে সাবেক স্পিকার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বিশেষ এই ব্যবস্থাপনা চান।
তবে শিরীন শারমিন কোথায় আঙুলের ছাপ দিয়েছেন, তা রহস্যই রয়ে গেছে। পুলিশ সূত্রমতে, পাসপোর্টের আবেদনপত্রে তিনি ধানমন্ডির যে বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করেছেন, সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম অনুযায়ী, আবেদন থেকে শুরু করে সব কাজ ঘরে বসে করা গেলেও আঙুলের ছাপ ও আইরিশ দেওয়ার নির্ধারিত তারিখে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
কেবলমাত্র অসুস্থ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিশেষ সুবিধা পাবেন। পাসপোর্ট অফিসের মোবাইল টিম বাসা বা হাসপাতালে গিয়ে আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ করবে।
হত্যা মামলার ফেরার আসামির 'নিরাপদ আশ্রয়' থেকে আঙুলের ছাপ নেওয়ায় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) মো. ফিরোজ সরকার বলেন, 'এই ব্যাপারে মন্তব্য করা আমার এখতিয়ারের বাইরে।'
এটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব এবং তিনি এর জবাব দেবেন, যোগ করেন ফিরোজ।
যোগাযোগ করা হলে জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান জানান, তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তিনি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে (ডিআইপি) যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
দ্য ডেইলি স্টার ডিআইপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিআইপি জানিয়েছে, 'সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বর্তমানে কোনো সচল পাসপোর্ট নেই। অন্য সবার মতো তার কূটনৈতিক পাসপোর্টও ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।'
'প্রায় দেড় মাস আগে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দিয়ে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধাপে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের পরই কেবল একজন ব্যক্তিকে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়,' উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে আরও যোগ করা হয়, 'শিরীন শারমিন চৌধুরীর কূটনৈতিক পাসপোর্টের পরিবর্তে নতুন সাধারণ পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাকে এখনো নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি।'
দ্য ডেইলি স্টার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে তিনি কল রিসিভ করেনি।
Comments