আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চায় বাংলাদেশ, রয়টার্সকে জ্বালানি উপদেষ্টা

আদানি গ্রুপ
আদানি গ্রুপ : আবারও আলোচনায় আদানি গ্রুপ। প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কে পড়েছে সুদূর পূর্ব আফ্রিকাতেও। এই বিতর্ক কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে ৩০ বছরের ইজারা নিয়ে।

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি আদালত থেকে বাতিল না হলে যে দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তা দ্রুত কমাতে চাইবে বাংলাদেশ। রোববার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে এই কথা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। আদানি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও এরই মধ্যে ভারতের একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে ফ্রান্সের তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জি।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়েছে আদানি গ্রুপ। এই চুক্তি বাতিলের জন্য গত সপ্তাহে একজন আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হাইকোর্ট চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে আদালত আদেশ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। গত আগস্ট মাসে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আমদানি করা কয়লার বেশি দাম দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। গত বছর উৎপাদনে যাওয়া ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎচাহিদার এক দশমাংশ পূরণ করে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির তার অফিসে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'চুক্তিতে অসঙ্গতি থাকলে আদানির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে। শুধুমাত্র দুর্নীতি এবং ঘুষের মতো অনিয়ম হয়ে থাকলে চুক্তি বাতিল হবে।'

আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত চলছে তার ভিত্তিতেই এটি হবে।

তিনি বলেন, কিছু ইস্যু আছে, যেমন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতে যে করছাড় পাচ্ছে এর উপকার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি পুনর্বিবেচনার একাধিক কারণের মধ্যে এটিও একটি হতে পারে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য চাওয়া হলেও আদানি গ্রুপের দিক থেকে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স। তবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড তার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে যে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশকে নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে যাতে আখেরে ভোক্তাদের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

ফাওজুল কবির খান বলেন, আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই তিনি মনে করেন।

বিগত সরকারের আমলে যেসব বিদ্যুৎচুক্তি হয়েছে সেগুলো এখন পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করে দেওয়া একটি কমিটি। চুক্তিগুলো যথাযথভাবে হয়েছে কি না, চুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে কি না, জাতীয় স্বার্থ বিনষ্ট হয়েছে কি না, এসব বিষয় যাচাই করে দেখছে কমিটি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানির উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ দাম। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানির বিদ্যুতের দাম ১২ টাকায় নেমে এলেও তা ছিল ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উত্পাদনকারীর তুলনায় ২৭% বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩% বেশি।

বাংলাদেশে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। এই খাতে সরকারকে প্রতি বছর ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান জ্বালানি উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই বিদ্যুতের দাম, শুধু আদানি থেকেই নয়, গড় খুচরা দামের নিচে নামুক।

তিনি আরও বলেন, আদানি থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তার মূল্য পরিশোধ করতে থাকবে বাংলাদেশ। অর্থপ্রদানে বিলম্বের কারণে সম্প্রতি কোম্পানিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছিল।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা রয়েছে। তবে গ্যাসের ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে উৎপাদনে নেই।

'আদানি যখন সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশের কিছুই হয়নি। আমরা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দেব না,' বলেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

3h ago