নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা

ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য।

জাতীয় ঐক্য গঠনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।

ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, 'পত্র-পত্রিকায় দেখে মানুষের কথা শুনে মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে। জবাব খোঁজার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসা। বিগত সরকারের পতনের পর আমি বিমানবন্দরে নামি ৮ আগস্ট। তখন সবার কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম যে, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, ধর্ম, রীতিনীতি থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই একটা পরিবারের সদস্য। এটাতে জোর দিয়েছিলাম।'

'আমাদের পার্থক্য থাকলেও, আমরা কেউ কারও শত্রু নই। আমরা বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক কাতারে। যখন শপথ নেই, তারপর শুনি যে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম আমরা এক পরিবারের। তারা দাবি-দাওয়া জানালেন। পরিষ্কার দাবি, সবার সমান অধিকার। এই অধিকার সংবিধানের। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা,' বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আবার শুনলাম সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তখন আবার সবার সঙ্গে বসলাম। এরপর দুর্গাপূজার সময় এল। সবাইকে বললাম এটা সুযোগ, উৎসব-আনন্দের ব্যাপার। নিশ্চিত করতে হবে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো ধরনের হামলা যেন না হয়। সবাই বিষয়টাকে নিল। আমি খুশি হলাম। তাঁতিবাজারে একটা ঘটনা ঘটেছিল, এটা ছাড়া আর কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। খুব আনন্দিত হয়েছিলাম যে পুরো সময়টা একটা জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল।'

ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, 'এখন আবার নতুন কথা, হামলা-অত্যাচার হচ্ছে, বিদেশি প্রচারমাধ্যম বলছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি যে কেন হচ্ছে, কী হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে। সবদিক থেকে বলছে যে কিছু হচ্ছে না। তাহলে যে তথ্য আমরা পাচ্ছি, আর যা প্রচার হচ্ছে তার মধ্যে একটা ফারাক থেকে গেছে। আমি যে তথ্য পাচ্ছি তা ভুল হতে পারে। তাই তথ্যের ওপর ভরসা করে বসে থাকা মানে অন্ধের মতো বসে থাকা। আমাদের ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে যে, তথ্যের মধ্যে গরমিল কেন। তাহলে, ওরা যা বলছে সেটা মিথ্যা, নাকি আমরা যা জানছি সেটা মিথ্যা। সত্যটা কোথায়?'

'আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। সেখানে সঠিক তথ্য কীভাবে পাব, সেটা আমাদের জানান। প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চায়, সেভাবে বলে। আসলটা মন খুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই,' যোগ করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, 'এত বড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যেন সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।'

তিনি বলেন, 'প্রথম কথাটা হলো, অত্যাচার না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আমি যা বলছি তা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে। আমরা এক পরিবারের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেখানে তথ্য ও প্রতিকার হলো বড় বিষয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি তথ্য পেলাম, কিন্তু প্রতিকার পেলাম না, সমস্যা হয়ে গেলে সমাধান করতে হবে। আজকের আলোচনা খোলাখুলি, আমরা সবাই আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্যে কোনো গোলমাল নেই। তথ্যপ্রবাহ কীভাবে পাব, দোষীকে কীভাবে ধরব, যেন সবাই সঠিক তথ্যটা পেয়ে যায়। এমন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যার নাম দিয়েছি নতুন বাংলাদেশ।'

'আপনাদের কথা বলে সন্তুষ্ট করে আজকের মতো বিদায় দিলাম তা নয়। এটা দ্রুত করতে হবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, আমাদের বর্তমানেই করে যেতে হবে। 
কীভাবে নিরাপদে সংগ্রহ করব, যে তথ্য দিচ্ছে সে যেন বিব্রত না করে তাও নিশ্চিত হতে হবে,' বলেন তিনি। 

Comments

The Daily Star  | English

New Trump tariffs: early modelling shows most economies lose – the US more than many

The tariffs will compel foreign producers to lower their prices. But these price decreases only partially offset the cost of the tariffs, so US consumers pay higher prices.

45m ago