স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া হলে কী করবেন, প্রতিরোধে করণীয়

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া
ছবি: সংগৃহীত

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ, যা খুবই কষ্টদায়ক। স্ক্যাবিস হলে কী করবেন এই বিষয়ে জেনে নিন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খানের কাছ থেকে।

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া কী

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবী চর্মরোগ। এটি ছোঁয়াচে, সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামক এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে স্ক্যাবিস হয়।

স্ক্যাবিস হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জীবাণু একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। পরিবার, হোস্টেল, মাদ্রাসায় একজন আক্রান্ত হলে দেখা যায় বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি এলাকা, হোস্টেল, মাদ্রাসায় যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন এমন পরিবেশে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব বেশি ছড়ায়।

সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

১.স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া হলে সারা শরীরে চুলকানি হয়। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়।

২. চুলকানি রাতে বেশি হয়।

৩. ছোট ছোট র‌্যাশ বা ফুসকুঁড়ির মতো হয়।

৪. চিকিৎসা না হলে দীর্ঘদিন চুলকানির ফলে একসময় ঘা এর মতো হয়ে যায়, সংক্রমিত হয়ে যায়।

এ ছাড়া নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস নামে এক ধরনের স্ক্যাবিস আছে যা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস নামেও পরিচিত। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অনেক বেশি বয়স, কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন বিছানায়, এইচআইভি আক্রান্ত রোগী, তাদের মধ্যে এটি দেখা যায়। ক্রাস্টেট স্ক্যাবিস হলে শরীরে স্কেলিং হয় অর্থাৎ চামড়া উঠতে থাকে, চামড়ার স্তর জমে জমে পুরু হয়ে যায়।

চিকিৎসা

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় পারমিথ্রিন, প্রোটামিটেন, সালফার ক্রিম দেওয়া হয় রোগীকে। এর পাশাপাশি মুখে খাওয়ার কিছু ওষুধ দেওয়া হয়।

আমাদের দেশে স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি পারমিথ্রিনি ক্রিম ব্যবহার করা হয়। রোগীর বয়স অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমিথ্রিন ক্রিম গলা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে শরীরের সব জায়গায় লাগাতে হবে। ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে হবে।

৭ দিন পর একইভাবে পুনরায় পারমিথ্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

এ ছাড়া স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় প্রোটামিটেন এবং সালফার ক্রিম টানা ৫ দিন ব্যবহার করতে বলা হয়।

ক্রিম ব্যবহার কাজ না দিলে প্রয়োজনে আইভারমেকটিন নামক মুখে খাওয়ার ওষুধ সপ্তাহে একটা করে চার সপ্তাহ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না।

এর পাশাপাশি রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে, ব্যবহৃত সবকিছু গরম পানিতে ফুটিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে, যাতে পরজীবীমুক্ত হয়। পরে পোশাক আয়রন করে নিতে হবে পরার আগে।

প্রতিরোধ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া যাতে না হয় সেজন্য সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। স্ক্যাবিস সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। কারো স্ক্যাবিস হলে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সতকর্তা মেনে চলা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

IMF to continue talks with Bangladesh for near-term agreement

The global lender said such an agreement would pave the way for completing the combined third and fourth reviews

2h ago