৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চাল আমদানি করবে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

এ বছর ৭ লাখ টন চাল আমদানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত সাত বছরের মধ্যে এটাই হবে সোর্বোচ্চ পরিমাণ চাল আমদানি।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে জর্জরিত স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে এবং খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে এবং এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় বাজারে চালের দাম বেশি।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, 'মানুষকে কিছুটা হলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এই চাল আমদানি করা হবে বলেও জানান তিনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। পরে তা সংশোধন করে সাত লাখ টনে নামানো হয়েছে।

গত বছর বিদেশ থেকে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। ২০২৩ ও এর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে চাল আমদানির পরিমাণ বিপরীতক্রমে ছিল ৬ দশমিক ৩৩ লাখ টন, ৬ দশমিক ৮৩ লাখ টন, ৫ দশমিক ৭২ লাখ টন, শূন্য টন ও ৬৫ হাজার ৩৮৩ টন।

বর্তমানে সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে তিন লাখ টন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে।

মিয়ানমার থেকে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) এক লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, প্রথম চালানের ২৭ হাজার টন ইতিমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এই মাসের শেষের দিকে আরও একটি চালান আসবে।

পাকিস্তান থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করা হবে।

ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি খাতে চাল আমদানি শুল্কমুক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

গত এক মাসে চিকন চালের দাম ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গত এক বছরে চিকন চালের দাম ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি কেজি চিকন চাল ৭০ থেকে ৮৪ টাকায়, মোটা চাল ৫৪-৫৮ টাকায় এবং মাঝারি চাল ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের আগস্ট ও অক্টোবরে পরপর দুটি বন্যায় বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের মে মাসে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ বিপণন বছরে আমন মৌসুমে কম জমিতে চাষ হওয়ায় চাল উৎপাদন কমতে পারে।

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে দেশে চালের সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোনো ঘাটতি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত ১২ জানুয়ারি সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১২ দশমিক ২৫ লাখ টন, যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। মজুদ থাকা খ্যাদ্যের মধ্যে ৮ দশমিক ২ লাখ টন চাল।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির মাধ্যমে চালের দাম কমানো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

তবে দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকারকে দেশীয় উৎপাদনের সঙ্গে আমদানির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

'কৃষকদের ওপর চাল আমদানির প্রভাব উপেক্ষা করা উচিত নয়,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

PSC announces major changes to ease BCS recruitment process

The PSC chairman says they want to complete the entire process — from prelims to recruitment — in 12 months

2h ago