গাজায় যুদ্ধবিরতি

প্রথম দিনে মুক্তি পেলেন ৩ ইসরায়েলি ও ৯০ ফিলিস্তিনি

অধীকৃত পশ্চিম তীরের শহর বেইতুনিয়ায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সন্তানকে জড়িয়ে ধরেছেন এক ফিলিস্তিনি মা। ছবি: এএফপি
অধীকৃত পশ্চিম তীরের শহর বেইতুনিয়ায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সন্তানকে জড়িয়ে ধরেছেন এক ফিলিস্তিনি মা। ছবি: এএফপি

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর তিন ইসরায়েলি নারী বন্দি মুক্তি পান। সঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিও।

গতকাল রোববার নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

সিএনএন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে আরও চার ইসরায়েলি ও অজ্ঞাত সংখ্যক ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

তেল আবিবে ফিরেছেন ইসরায়েলি জিম্মিরা

মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলি জিম্মি। ছবি: ডয়চে ভেলে
মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলি জিম্মি। ছবি: ডয়চে ভেলে

ইসরায়েলি নাগরিক রোমি গোনেন, এমিলি ডামারি ও ডোরন স্টাইনব্রেগার রোববার মুক্তি পেয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ওই তিন নারীকে তেল আবিবের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন।

আইডিএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিন নারী বন্দিকে মুক্তি দিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নিয়ে আসার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইসরায়েলের সুরক্ষা সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। প্রথমেই তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

ফিলিস্তিনিরা আশাবাদী

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দীরা একটি বাসে করে অধীকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় এসে পৌঁছান। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দীরা একটি বাসে করে অধীকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় এসে পৌঁছান। ছবি: এএফপি

হামাস তিনজন ইসরায়েলি নারী বন্দিকে মুক্তি দেয়ার পর ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা সবাই নারী ও শিশু।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের কারাগার থেকে অন্যদের পাশাপাশি মুক্তি পেয়েছেন রাজনীতিবিদ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা খালিদা জাররার।

খালিদা জাররার একসময় ফিলিস্তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ইসরায়েলে তাকে নির্জন কারাকক্ষে রাখা হয়েছিল। মুক্তির পর খালিদার শীর্ণ চেহারা দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এসব শিশুর কয়েকজনকে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর পাথর ছোড়ার অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্দীদের তালিকায় এমন শত শত মানুষের নাম আছে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগও আনা হয়নি।

ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের সংগঠন প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটি এবং কারাবন্দী ও সাবেক কারাবন্দীদের জন্য গঠন করা কমিশন জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ১০ হাজারের বেশি মানুষ এখনো ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় বন্দী আছেন।

গাজার মানুষ ৪২ দিনের এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে।

ডয়চে ভেলেকে তারা জানিয়েছেন, তাদের আশা, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।

বাড়ি ফিরে নাপিতের কাছে চুল কাটাচ্ছেন ১৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কাশেম জাফরা। ছবি: এএফপি
বাড়ি ফিরে নাপিতের কাছে চুল কাটাচ্ছেন ১৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কাশেম জাফরা। ছবি: এএফপি

রাফা থেকে ৪৩ বছর বয়সি আল নাসের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কারণ, এর ফলে রক্তপাত থামবে। বাচ্চাদের জীবন বাঁচবে।

তিনি জানিয়েছেন, 'রাফায় ফিরে আমি বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। যে জায়গায় আমি থাকতাম, সেই জায়গাটা দেখে মনে হয়েছে, যেন ভয়ংকর ভূমিকম্প সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শিউরে ওঠার মতো দৃশ্য।'

নাসের জানিয়েছেন, 'সব ফিলিস্তিনি আশা করে, শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে। আমরা অর্থ চাই না। আমরা গাজায় শান্তিতে থাকতে চাই।'

২১ বছর বয়সি মালাক হুসেন মধ্য গাজায় একটি ত্রাণশিবিরে থাকেন। তিনি বলেছেন, 'আমার একটাই কামনা, গাজা যেন আগের মতো হয়ে যায়। আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলতে পারব।'

তিনি জানিয়েছেন, 'আর যেন যুদ্ধের মধ্যে পড়তে না হয়। শান্তি যেন বজায় থাকে। আমার একটাই প্রার্থনা যুদ্ধ যেন আর কখনো ফিরে না আসে।'

বাইডেনের সন্তুষ্টি প্রকাশ

ঘড়িতে সময় দেখছেন জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
ঘড়িতে সময় দেখছেন জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ কর্মদিবসে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন জো বাইডেন।

তিনি বলেছেন, 'প্রচুর রক্তপাত ও মৃত্যুর পর গাজায় যুদ্ধের দামামা থামল।'

এই যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, 'অনেক আলোচনার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। মতৈক্যে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ ছিল না। কিন্তু ইসরায়েল হামাসের ওপর ভয়ংকর চাপ সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘও চুক্তিকেও তারা সমর্থন করেছিল।'

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

7h ago