প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর দায় কে নেবে?

ইলাসট্রেশন: বিপ্লব চক্রবর্তী

প্রবাসী কর্মীদের অস্বাভাবিক উচ্চ মৃত্যুর হার আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে চার হাজার ৮১৩ জন প্রবাসী কর্মীর মরদেহ এসে পৌঁছেছে, যার বেশিরভাগই আরব উপসাগর, তথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এসেছে। ২০২১ সাল থেকে শুরু করে প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে—২০২১ সালে তিন হাজার ৮১৮, ২০২২ সালে তিন হাজার ৯০৪ ও ২০২৩ সালে চার হাজার ৫৫২ জনের মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৭৬৯ প্রবাসী কর্মীর মরদেহ দেশে এসেছে, যা খুবই আশঙ্কাজনক। এখানে প্রশ্ন হলো, কী কারণে এতজন প্রবাসী কর্মী প্রাণ হারাচ্ছেন? বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কি সংশ্লিষ্ট দেশের কাছ থেকে প্রবাসী কর্মীদের এমন মর্মান্তিক পরিণতির বিষয়ে উপযুক্ত জবাব চেয়েছে?

প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির আশায় বিদেশে পাড়ি দেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদের অনেকেই সেখানে যেয়ে চরম দুর্দশার মুখে পড়েন এবং কফিনে করে দেশে ফিরে আসেন, বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। বলাই বাহুল্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করতে যান। প্রায়ই তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো হয় না। মৃত্যুর সনদে অনেক সময়ই মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'হার্ট অ্যাটাকের' কথা উল্লেখ থাকে। এই দেশগুলো প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে তদন্ত করে না বললেই চলে আর বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষও জবাব খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি, আমাদের নারী প্রবাসী কর্মীরা প্রায়ই নিয়োগদাতার হাতে শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। অভিযোগ আছে, নারী কর্মীদের অনেকের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা।

বছরের পর বছর বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীরা আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-সুস্থতা রক্ষার চর্চা না থাকা এবং তাপ, বায়ুদূষণের মাঝে বৈরি পরিবেশে কাজ করে শারীরিক-মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কি কর্মীদের জীবনযাত্রা ও কাজের পরিবেশের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?

বিদেশে যাওয়ার খরচ উঠিয়ে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য কর্মীরা নিরন্তর চাপের মুখে থাকেন। যার ফলে তারা বাড়তি কাজ করেন এবং বিশ্রামের সুযোগ পান না বললেই চলে। বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার খরচ কমানোর জন্য কি কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? 

কেন আমরা প্রবাসী কর্মীদের সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করছি, যেখানে তাদের শ্রম ও রেমিট্যান্সকে আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়? আমরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, প্রবাসী কর্মীদের জীবন ও কল্যাণকে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হোক। বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশনগুলোকে প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও কল্যাণের বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে একটি শক্তিশালী নিরীক্ষা প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, যাতে কর্মক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা, উন্নত থাকা-খাওয়া ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও, কোনো প্রবাসী কর্মী বিপদে পড়লে যাতে সে দেশের শ্রম আইনের সুবিধা নিতে পারেন এবং নিয়োগদাতাকে যেন কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ, অনিরাপদ কাজের পরিবেশ ও তাদের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়, সেটা নিশ্চিতে বিদেশি সরকারের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে দেশের ওই দুই মন্ত্রণালয়কে।  আমাদের কর্মীদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতেরও দাবি জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে।   

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago