৩ বছর ধরে মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি প্রবৃদ্ধি কম

পোশাকশ্রমিক
ছবি: সংগৃহীত

মূল্যস্ফীতির চাপ চলমান থাকলেও টানা তিন বছর ধরে শ্রমিকের মজুরি সেই অনুপাতে বাড়ছে না। কম আয়ের পরিবারগুলো মাছ-মাংস কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। পড়ে যাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে—গত জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৩৬ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ চলছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে মজুরি বাড়ানো হলেও সেই বাড়তি টাকা ঢুকে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির পেটে।

বিবিএস ওয়েজ রেট ইনডেক্স (ডব্লিউআরআই) অনুসারে—গত জানুয়ারিতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক ১৬ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতির হার ছিল নয় দশমিক ৯৪ শতাংশ।

গত বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য ছিল তিন দশমিক ৭৩ শতাংশ পয়েন্ট।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন—এ কারণে কম আয়ের ও অদক্ষ শ্রমিকরা খাবার কম খেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনেও এমনটি জানা যায়।

এফএও বলছে—তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা গত বছরের ডিসেম্বরে ৭০ লাখ বেড়ে দুই কোটি ৩৬ লাখ হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল-অক্টোবরে তা ছিল এক কোটি ৬৫ লাখ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্যস্ফীতির কারণে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। বছরের পর বছর ধরে কম ও সীমিত আয়ের মানুষ পড়ে যাচ্ছে খাদের কিনারায়।'

তার মতে, 'দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলতে থাকলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। তাদের খাবারে পরিবর্তন আসে।'

গত জানুয়ারিতে সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। ফেব্রুয়ারি ও জুন বাদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতি মাসে তা ছিল সাড়ে নয় শতাংশের বেশি।

তবে শহরাঞ্চলে গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে পৌঁছালে শহরের দরিদ্র মানুষের সংকট আরও বেড়ে যায়।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ায় মানুষ মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে।'

'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ প্রাথমিকভাবে বিনোদন ও পোশাকের মতো খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমিয়ে দেয়। যদি তা যথেষ্ট না হয়, তাহলে তারা খাবার কমাতে শুরু করে।'

তার মতে, 'কম আয়ের মানুষ পুষ্টিকর খাবার এড়িয়ে চলেন। সস্তা-নিম্নমানের খাবার খান।'

জানুয়ারিতে কৃষিখাতে মজুরি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আট দশমিক ৪১ শতাংশ। ডিসেম্বরের তুলনায় শূন্য দশমিক শূন্য চার শতাংশ পয়েন্ট বেশি। শিল্পখাতে মজুরি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে সাত দশমিক ৮০ শতাংশ ও সেবা খাতে শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে আট দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে।

মজুরি হার সূচক বা ডব্লিউআরআই কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ৬৩ পেশায় দৈনিক বেতনভুক্ত অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরির হিসাব রাখে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজস্ব ও মুদ্রানীতিসহ সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে সরকারকে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।'

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় অন্তত ৭৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যে পড়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ চরম দারিদ্র্যের শিকার।

এ ছাড়াও, অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে আরও এক কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

গত মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে বেশকিছু উদ্যোগ নেব। জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ছয় থেকে সাত শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে সরকার তা সন্তোষজনক বলে বিবেচনা করবে।'

তবে এ লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তার ভাষ্য, 'আশাবাদী হতে চাই। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।'

তিনি বলেন, 'এখন সবজিসহ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের দাম কমতে দেখছি। তারপরও চালের দাম চড়া।'

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Gridline woes delay Rooppur Power Plant launch

The issue was highlighted during an International Atomic Energy Agency (IAEA) inspection in March

1h ago