সাগর-রুনি হত্যা: ১৩ বছর ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

সাগর-রুনি হত্যা
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ছবি: সংগৃহীত

৭৩ বছরের সালেহা মনির গত ১৩ বছর ধরে ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তার অপেক্ষার পালা আর ফুরায় না।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির এক বিভীষিকাময় রাতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনিকে হত্যার পর থেকেই তদন্ত চলছে। তবে আদালতের নথি অনুসারে গতকাল পর্যন্ত জোড়া খুনের এই মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ভুক্তভোগী পরিবার এই ঘটনায় হতাশা জানিয়ে বলেছেন, এটি তদন্তকারীদের ১৩ বছরের ব্যর্থতা।

সাগরের মা সালেহা মনির গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সবসময়ই ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু বিচার পাচ্ছি কোথায়?'

'এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় কেউ রয়েছে। তাই এতদিন এটি প্রকাশ করা হয়নি। যদি কোনো চোর বা ডাকাত এটি করত, তবে অনেক আগেই এটি প্রকাশ পেত,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি তদন্তকারীদের একটা কথাই বলেছি, চুরি বা ডাকাতির অজুহাত দিও না। আমি সেটা মেনে নেব না।'

'আমরা একেবারে অন্ধকারে আছি। কোনো আশা বা প্রত্যাশা নেই। পিবিআই এখন তদন্ত করছে। তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। দেখা যাক তারা কতদূর তারা কী করতে পারে,' বলেন সালেহা মনির।

হত্যার ঘটনায় ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় জোড়া খুনের মামলা করেছিলেন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন তিনি তদন্তকারীদের ওপর আস্থা রাখতে চান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার অন্তত এই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করবে।

নওশের বলেন, নতুন তদন্তকারী সংস্থা দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এখন কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাসের সময়সীমা আছে। ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা কতটা আশাবাদী তা ওই প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যাবে।

সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক এবং তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় তাদের হত্যা করা হয়।

বাসায় ছিল তখন তাদের তাদের একমাত্র সন্তান মাহির সরোয়ার মেঘ। যার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।  

হত্যাকাণ্ডের পর আট জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন— কামরুল ইসলাম ওরফে অরুণ, আবু সাঈদ, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, পলাশ রুদ্র পাল, আনামুল হক ওরফে হুমায়ুন কবির এবং তানভীর রহমান খান। তানভীর ও পলাশ বর্তমানে কারাগারের বাইরে ও অন্যরা কারাগারে আছেন।

হত্যা মামলা

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার পর, শেরেবাংলা নগর থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন দিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে তদন্তকাজ হস্তান্তর করা হয়। ডিবি ওই বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তকাজ পরিচালনা করে।

মামলাটি ২০১২ সালের এপ্রিলে র‍্যাবের কাছে স্থানান্তরিত হয়। র‍্যাব গত বছরের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত পরিচালনা করে।

পরদিন ৪ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশে পিআইবি মামলার তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর, মামলাটি তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয় যেখানে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।

টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান ও আসামি হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পিবিআই। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন।

যোগাযোগ করা হলে, তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বলেন, 'যেহেতু তদন্ত চলছে তাই আমরা এই মুহূর্তে কোনো অগ্রগতি প্রকাশ করতে পারছি না।'

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা মামলার সঙ্গে জড়িত ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

6h ago