উত্তরের চার জেলায় এক বছরে তামাক চাষ বেড়েছে ৪৪ শতাংশ

রংপুরের মমিনপুর গ্রামে শুধু তামাক আর তামাক। ছবি: এস দিলীপ রায়

দেশের উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় গত বছর তামাক চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমিতে। কৃষিজমি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই ফসলের চাষ এবার ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এর আগে ২০২৩ সালে তামাক চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে।

দেশে মূলত উত্তরের চারটি জেলায় তামাক চাষ হয়। জেলাগুলো হলো লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করায় তামাক চাষ বেড়েই চলেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত তামাকের ৬০ শতাংশ আসে লালমনিরহাট থেকে। এর পরই রয়েছে রংপুর। এই জেলা থেকে আসে ২০ শতাংশ তামাক। নীলফামারীতে ১৫ শতাংশ আর ৫ শতাংশ গাইবান্ধায়। দেশি-বিদেশি কয়েকটি তামাক কোম্পানি এখানে রীতিমতো তামাকের বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তুলেছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলাকে বলা হয় 'তামাকের রাজধানী'। উপজেলার টিপারবাজার গ্রামের কৃষক সেজাব আলী গত বছর চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। তার খরচ হয়েছিল ৮৬ হাজার টাকা। ওই জমিতে উৎপাদিত ৩৩ মণ তামাক বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায়। বাড়তি লাভের আশায় এবার সাত বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন তিনি।

সেজাব আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর তামাকের দাম আরও বাড়বে। কোম্পানির লোকজন এসে তামাক কিনে নিয়ে যায়। তামাকের বাজারদর নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এ বছর তামাক দিয়ে মাঠ ভরে গেছে।'

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৭০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি গত ৩৯ বছর ধরে তামাক চাষ করছেন। তবে এ বছরের মতো ব্যাপক জমিতে তামাক চাষ আগে কখনো দেখেননি।

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর অনেক কৃষক নতুনভাবে তামাক চাষ করেছেন। তামাক কোম্পানি থেকেই বীজ, সার, কীটনাশক ও সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়। গেল বছর তামাকের বাজারদর বেশি ছিল। তাই এ বছর কৃষকরা তামাক চাষে আরও বেশি ঝুঁকেছেন।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই গ্রমের কৃষক প্রবির চন্দ্র বর্মণ (৬৫) বলেন, 'তামাক জমির উর্বরতা নষ্ট করে। এটি মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর পরও কৃষকরা তামাক চাষে বেশি আগ্রহী। কারণ, অন্য ফসলের তুলনায় তামাকে লাভ বেশি।'

'তামাক কোম্পানিগুলো যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে তাতে আগামীতে তামাকের চাষ আরও বাড়বে,' বলেন তিনি।

অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের সদস্য খোরশেদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তামাকের চাষ বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তামাক কোম্পানিগুলোর অবাধ কার্যক্রমে লাগাম টানতে হবে। কোম্পানি থেকে সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ হলে কৃষকরা তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। এজন্য সরকারের শক্ত পদক্ষেপ দরকার।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকদের কোনোভাবেই তামাক চাষ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। এর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো দায়ী। জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তামাক। খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।'

রংপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারাও চিন্তিত। সরকারিভাবে তামাক চাষ নিষিদ্ধ না হওয়ায় কৃষি বিভাগ শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে না। উন্নত দেশগুলো তামাক চাষ বন্ধ করায় বাংলাদেশে এটা বেড়ে গেছে। তামাক কোম্পানিগুলো রংপুর অঞ্চলে আস্তানা গেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'কৃষকের কাছে তামাক অর্থকরী ফসল হলেও এটি মাটি, পরিবেশ ও মানব-স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এটি কৃষির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।'

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করতে কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago