দাম বাড়ার গুজবে লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পাঠানটারী গ্রামের কৃষক আলম বাদশা (৫৮)। গত বছর ৭ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে।
আদিমারী উপজেলার পাঠানটারী গ্রামে জমিতে তামাক চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পাঠানটারী গ্রামের কৃষক আলম বাদশা (৫৮)। গত বছর ৭ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে।

এ বছর তামাকের দাম বাড়বে—তামাক কোম্পানির লোকজনের এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে এবার ৩ বিঘা বেশি জমিতে তামাক চাষ করেছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।

অথচ তার পরিকল্পনা ছিল তামাক চাষ কমানোর। ৩-৪ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে অবশিষ্ট জমিতে আলুসহ অন্য ফসল চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তামাকের দাম বাড়বে শুনে সিদ্ধান্ত বদলেছেন।

আলম বাদশার ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৪) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে ধান ও সবজি চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তামাক চাষে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তারপরও তারা তামাক চাষ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেন না। তামাক কোম্পানির কাছে আমরা এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছি।'

'এক বিঘা জমিতে তামাক চাষ করতে ১২৫ কেজি ইউরিয়াসহ ১৯০ কেজি সার ব্যবহার করতে হয়। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত শ্রম দিতে হয়,' তিনি বলেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ঘনোশ্যাম গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে তামাকের চারা রোপণ করেছেন। গত বছর তামাক চাষ করেছিলেন ৩ বিঘা জমিতে।

তিনি বলেন, 'তামাক কোম্পানির লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, এ বছর তামাকের দাম বাড়বে। তাই ৫ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি। তামাক কোম্পানি আমাদেরকে সার, বীজ ও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিয়ে সহায়তা করে।'

আদিতমারী উপজেলার সারপকুর গ্রামের সুরেশ চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, '১ বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ তামাক উৎপন্ন হয় আর এতে খরচ হয় ১৩-১৪ হাজার টাকা। গেল বছর প্রতি মণ তামাক ৫ হাজার-৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। এ বছর তামাকের দাম আরও বাড়বে এমন আশ্বাসও পাওয়া গেছে। তামাক সাধারণ উর্বর জমিতে চাষ করা হয়। এ বছর আমি ৩ বিঘা জমি বাড়িয়ে ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লালমনিরহাটে তামাকের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯০০ হেক্টর, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯ হাজার ১২০ হেক্টর ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ১৭৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল।

তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, বাস্তবে কৃষি বিভাগের তথ্যের দ্বিগুণের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়। 

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক এমনকি সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে তামাক কোম্পানিগুলো। এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন গুজব কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তামাক কোম্পানির লোকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ কাজ না করলে কৃষকদের সহজে তামাক চাষ থেকে ফিরিয়ে আনা যেত।'

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন তথ্য কোনো কৃষকে দেওয়া হয়নি। এটা একটা গুজব এবং এটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে গেছে।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালমনিরহাটে ২০-২২ হাজার চাষী তামাক চাষে সম্পৃক্ত। তামাক কোম্পানিগুলো এই চাষীদের কার্ডও দিয়েছে। সরকারি কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো সরব থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।'

'আমরা কৃষকদের সচেতন করছি। কিন্তু কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন', যোগ করেন তিনি।

Comments