মেলা থেকে মাছ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার রীতি যেখানে

কিশোরগঞ্জ
ছবি: টি আজিজ/স্টার

আক্কাস আলীর বয়স ৬৫। এ বয়সেও মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ভোলেননি। তারেকুর রহমান সেলিম চাকরি করেন ঢাকায়। পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও প্রায় ২০ বছর ধরে মেলার সময় ছুটে আসেন। বড় মাছ কিনে নিয়ে যান শ্বশুর বাড়িতে। এবারও ৩৫ হাজার টাকায় প্রায় ২২ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ কিনে নিয়ে গেছেন। আক্কাস আলীও প্রায় ৩৫ বছর ধরে মেলা থেকে বড় মাছ কিনে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন।

স্থানীয়রা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই মেলা থেকে মাছ নিয়ে জামাইদের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার প্রথা চলে আসছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। মেলা থেকে কিনে আনা মাছ 'জামাই মাছ' আর মেলাটি 'জামাই মেলা' হিসেবে পরিচিত। আশপাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামের জামাইরা মেলার সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। মেলাটি কুড়িখাই গ্রামের ঐতিহ্য।

ছবি: টি আজিজ/স্টার
 

কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আওয়াল মিয়া প্রায় ৫০ বছর ধরে এ মেলায় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। গত মঙ্গলবার রাতে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের দুটি বোয়াল মাছ আর ৩০ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য ক্রেতা আকর্ষণে হাঁকডাক করতে দেখা যায় তাকে। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, জেলার ভৈরব, কুলিয়ারচরসহ হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের বিভিন্ন নদী থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে মেলায় প্রায় ৫০ বছর ধরে বিক্রি করতে আসেন তিনি। সাতদিনব্যাপী এ মেলায় মাছ বিক্রি করে ভালোই আয় করে থাকেন।

তার পাশেই থাকা আল আমিন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে তিনি ৪০ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এরকম আরও কয়েকটি বড় মাছ বিক্রির জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতে দেখা যায় তাকে।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই গ্রামের মেলাটি প্রতি বছরের এ সময়ে বসে। এবার ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে মূল মেলাটি শুরু হয়েছে। এটি চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

ছবি: টি আজিজ/স্টার

গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িখাই মাজার লাগোয়া স্থানে দোকানপাট বসেছে। বিন্নিখই থেকে কারু, হস্ত, ইলেকট্রনিকস, আসবাবসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩০০ দোকান রয়েছে। শিশুদের জন্য নাগরদোলা, চরকিসহ রয়েছে 'মৃত্যুকূপ' খেলা দেখার ব্যবস্থা। এক পাশে বসেছে মাছের হাট। হাটে ছোট জাতের মাছের চাইতে বড় বড় মাছের অনেক সমাহার। কেউ কিনছেন বোয়াল, রুই, আইড় মাছ, কেউ কিনছেন চিতল কিংবা কালবাউশ মাছ। ক্রেতা মূলত জামাইরা।

সাধারণ মাছ বাজারের চেয়ে মেলায় মাছের দাম একটু বেশি হলেও বাজারের মাছের সঙ্গে মেলার মাছকে এক করতে চান না বিক্রেতারা। মাছ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এক সপ্তাহের জন্য অনেক টাকায় ইজারা নিয়ে এখানে ব্যবসা করার সুযোগ নিতে হয়। দাম বেশি হওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ।

কুড়িখাই মেলার ইতিহাস ৪০০ বছরের হলেও প্রযুক্তির এই যুগেও লোকজ সংস্কৃতির ধারায় এগিয়ে চলা মেলাটির আবেদন এতটুকু কমেনি। বরং প্রচার, প্রসার, আগ্রহ, আকর্ষণ, আবেদন বেড়ে চলেছে দিন দিন।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, এবার মেলার ইজারা দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

Comments

The Daily Star  | English
Portrait of Fascism Sheikh Hasina artwork Borsho Boron Anondo Shobhajatra

Anondo Shobhajatra marches on, embracing festivity

Besides teachers and students, people from all walks of life participated in the joyous and colourful procession that began from the Charukola premises around 9:00am

1h ago