আমানত ফেরত দিতে পারছে না ৭ ব্যাংক, চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বিপিসি

সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে রাখা প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা নগদায়ন করতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

এতে সরকারি এই সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বিলম্বিত হচ্ছে এবং নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের রদবদল হয়। এরপর গত চার মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে একাধিকবার আমানত নগদায়নের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায় বিপিসি।

কিন্তু ব্যাংকগুলো চিঠির কোনো জবাব দেয়নি এবং চট্টগ্রাম শাখায় রাখা বিপিসির টাকা ফেরত দেয়নি।

ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে এই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কয়েকটি ব্যাংক জানিয়েছে, নগদ অর্থ সংকটের কারণে তারা বিপিসির টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এই সাতটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠিত হয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ঋণ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং চট্টগ্রাম-ভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকার অভিযোগ ওঠে।

বিপিসি জানায়, এই ব্যাংকগুলোতে মোট ১ হাজার ৬৭৭ দশমিক ২৩ কোটি টাকা আমানত রয়েছে, যা স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং স্বল্প নোটিশের আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে। বিপিসির এই বিনিয়োগের পর সুদ বা লাভ পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছে না। 

বিপিসির চেয়ারম্যান এমডি আমিন উল আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা আমানত নগদায়নের চেষ্টা করছি। এসব ব্যাংকে আমাদের মোট ব্যালেন্স কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।'

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোকে নগদায়নের জন্য চিঠি পাঠায় বিপিসি।

আমিন উল আহসান বলেন, 'ব্যাংক আমানত থেকে অর্জিত সুদ বা লাভের অর্থ ব্যবহার করে বিপিসি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু তহবিলের অভাবে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বিলম্বিত হচ্ছে।'

এর মধ্যে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৭০১ কোটি ৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকে ২০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১৯৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা ও ইসলামী ব্যাংকে বিপিসির আমানত আছে ২০৭ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নগদ অর্থ সংকটের কারণে আমরা এখনই এফডিআর নগদায়ন করতে পারছি না। তবে, আমরা বিপিসিকে কিছু পরিমাণ মুনাফা পর্যায়ক্রমে দিয়েছি এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছি।'

ইউনিয়ন ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, 'তহবিল সংকটের কারণে আমরা এখনই বিপিসির এফডিআর নগদায়ন করতে পারছি না। তবে আমরা নিয়মিত মুনাফার অর্থ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বিপিসি ও অন্যান্য আমানতকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।'

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার অপারেশনস ম্যানেজার মো. মঈনউদ্দিন বলেন, 'আমরা তহবিল সংকটের কারণে বিপিসির অর্থ ছাড়তে পারছি না। তবে, আমরা বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি, যেন মুনাফার অর্থ পরিশোধ করা যায়।'

ইসলামী ব্যাংকে বিপিসির ২০৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে। তারা পুরো অর্থ নগদায়ন করতে না পারলেও বিপিসির জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্ট আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলে দিচ্ছে এবং পরে ব্যালেন্স সমন্বয় করছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু ব্যাংক আমাদের সুদ বা লাভ পরিশোধ করছে। বর্তমান ব্যাংকিং পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা জানেন। আমরাও চেষ্টা করছি আমাদের অর্থ পুনরুদ্ধার করতে।'

'আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
yunus to meet tarique rahman in london

Yunus-Tarique meeting in London on June 13: Fakhrul

The BNP secretary general expresses hope that the meeting could have significant implications for the country's political landscape

2h ago