রাষ্ট্রায়ত্ত-বিশেষায়িত ব্যাংকে পদোন্নতির পদ্ধতিতে পরিবর্তন

রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য প্রথমবারের মতো একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মরতদের পদোন্নতিতে শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করেছে। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীদের পদোন্নতির জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো। পরিপত্র অনুযায়ী, যেসব মাপকাঠিতে পদোন্নতি দেওয়া হয় তাতে অসামঞ্জস্যতা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির অস্পষ্টতা দূর করার জন্যই এই নীতিমালা করা হয়েছে।

নতুন অনুমোদিত এই নীতিমালা ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক—সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক—বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মীরাও এর আওতায় আসবেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পদোন্নতির মানদণ্ড

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেসব কর্মী নিজ নিজ ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালার শর্ত পূরণ করবেন, তাদের পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করতে হবে।

পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রতিটি ব্যাংককে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে গ্রেডভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির রেকর্ড, মেধা ও দক্ষতা, প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা, প্রমাণিত সততা এবং জ্যেষ্ঠতার মতো বিভিন্ন কর্মদক্ষতা সূচকের সমন্বয়ে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

তবে, ফিডার পদে থাকা অবস্থায় গত তিন বছরে দুর্বল কর্মদক্ষতার রেকর্ড থাকা কর্মীদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে না। এখানে উল্লেখ্য, যে পদ হতে পদোন্নতি দেওয়া হয় সেই পদকে ফিডার পদ বলে।

কর্মীরদের মধ্যে কার কর্মদক্ষতাকে অসন্তোষজনক বলা যাবে তা নির্ধারণের জন্য পরিপত্রে বিভিন্ন সূচকের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকা, যা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বাতিল করেনি।

অন্যান্য সূচকের মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডিত হওয়া এবং সেই দণ্ডের কার্যকারিতা বলবৎ থাকা অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত বা দণ্ডিত হওয়া।

এছাড়া, কোনো কর্মী যদি বিভাগীয় বা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অভিযুক্ত হন, ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হন বা গ্রেপ্তার হন, তবে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদোন্নতির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে, দণ্ড ভোগের পর এক বছর পর্যন্ত পদোন্নতি বিবেচনা করা হবে না। গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে, দণ্ড ভোগের পর দুই বছর পর্যন্ত পদোন্নতি বিবেচনা করা হবে না।

বিশেষায়িত ব্যাংকের পদোন্নতির মানদণ্ড

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে পদোন্নতির যোগ্যতা একটি কাঠামোগত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে পরিচালনা পর্ষদের দ্বারা নির্ধারিত ন্যূনতম যোগ্যতার নম্বর পেতে হবে।

মোট নম্বরের মধ্যে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষার জন্য, ৩০ শতাংশ মৌখিক পরীক্ষার জন্য এবং বাকি ২০ শতাংশ চাকরির রেকর্ড ও প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, পদোন্নতির আবেদন জমা দেওয়ার সময় কর্মীদের চাকরির রেকর্ড পরিষ্কার থাকতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো অমীমাংসিত বিভাগীয় মামলা বা শাস্তি থাকা যাবে না।

বাছাই প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই ও ভারসাম্য নিশ্চিত করতে প্রতিটি ব্যাংকে একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর সভাপতিত্বে একটি বিশেষ পদোন্নতি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটিতে মানবসম্পদ ও অডিট বিভাগের প্রতিনিধি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও পরপর তিনবার পদোন্নতি পেতে ব্যর্থ কর্মীদের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করা হবে। কোনো পদ্ধতিগত অবিচার বা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কারণে তাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে এই বোর্ড।

Comments

The Daily Star  | English
Pipeline to Carry Diesel to Dhaka From Ctg

Pipeline ready to carry fuel from Ctg to Dhaka

Chattogram-Dhaka fuel pipeline set for inauguration after successful trial runs

13h ago