প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার পথে কুয়েট শিক্ষার্থীরা 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলামের অপসারণ ও নতুন নিয়োগসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে এই সাক্ষাত হওয়ার কথা রয়েছে।

সকাল ৮টায় কুয়েট ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাসে করে ৮০ শিক্ষার্থী ঢাকার পথে রওনা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাথায় লাল কাপড় বাঁধা ছিল।

ঢাকার পথে রওনার আগে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীন। এজন্য আমরা দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করব। এরপর নিরাপদ জায়গায় চলে যাব। সেখান থেকেই অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম চলবে। যতদিন দাবি পূরণ না হচ্ছে, ততদিন ক্যাম্পাসে ফিরব না।'

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা এই মুহূর্তে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাহস করে যেতে পারছি না । তাই নিজেদের অর্থায়নে ক্যাম্পাসে বাস ডেকে এনেছি।'

'আমরা কুয়েট অথরিটির কাছে বাস সহায়তা চেয়েছিলাম। তারা আমাদের কোনো সহায়তা করেননি।  সরকার যেহেতু আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই আমরা চোখে লাল কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাস টোটালি শাটডাউন করে চলে যাচ্ছি। আমাদের দাবি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে কোন রকমের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলবে না,' বলেন তারা।

তারা আরও বলেন, 'ঘটনার পাঁচ দিন পরেও সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তার আশ্বাস আসেনি। আমাদের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতি, রামদা দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, যা জুলাই বিপ্লবের পর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন হামলা করতে কেউ সাহস করেনি । অথচ এই হামলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের মাথা ফেটে গেছে ,হাত তিন টুকরো হয়ে গেছে।'

'যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই বিপ্লবের ওপর দাঁড়িয়েছে সেই সরকার আমাদের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরার পরও যোগাযোগ করেনি । সেই সরকারকে আমাদের রক্তের দায় নিতে হবে। ইমেইলের মাধ্যমে স্মারকলিপি পাঠানোর তিন দিন পার হয়েছে, কিন্তু সরকারের থেকে কোনো সাড়া পাইনি। এই ক্যাম্পাস আমাদের জন্য সেফ না। যেখানে হামলার পর সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সেখানে কুয়েটের নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কেউ নেই। আমাদের নিরাপত্তা এখন আমরাই দিয়ে যাচ্ছি।'

শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, 'ক্যাম্পাসের বাইরে যেসব শিক্ষার্থী থাকে, তাদের বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছেন। তারা অনেক জায়গা থেকে হুমকি পাচ্ছেন। আমরা সবাই আতঙ্কিত, আমাদের পরিবার আতঙ্কিত। আমরা ক্যাম্পাসের ভিতরে বাইরে সেইফ না । আমরা অভিভাবকহীন। আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই।'

তারা বলেন, 'ভিসিসহ কিছু শিক্ষক বলার চেষ্টা করছেন আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বক্তব্য। হামলাকারীরা স্পষ্ট এবং চিহ্নিত কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। রক্তাক্ত কুয়েট প্রদর্শনীতে অস্ত্রধারীদের নাম পরিচয়, ছবি বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কুয়েটে ছাত্রদল সমর্থক ও বিএনপির লোকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের মনে হচ্ছে কুয়েট প্রশাসনেরই সমস্যা রয়েছে।'

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে ই-মেইলে চিঠি পাঠান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, '২০২৪ সালের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তা স্বত্বেও ছাত্রদল ক্যাম্পাসে রাজনীতি শুরু করতে চাইলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের ফর্ম বিতরণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেয়। এসময় কুয়েট ছাত্রদলের কর্মীরা হঠাৎ মিছিলে এসে ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়। এতে কুয়েট ছাত্রদল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় কুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং চার ঘণ্টা যাবত এই হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কোনো ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই মর্মে আমরা ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করি।'

Comments

The Daily Star  | English

Iran announces new wave of attacks on Israel: state TV

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

13h ago