দুশ্চিন্তায় অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস ‘স্ট্রেস ইটিং’ প্রতিরোধে যা করবেন

স্ট্রেস ইটিং
ছবি: সংগৃহীত

দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস হলে অনেকে একদম খেতেই পারেন না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে উল্টোটা। তারা মানসিক চাপ থেকে বেশি খেতে থাকেন। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

স্ট্রেস ইটিং কী ও কেন হয়

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, স্ট্রেস ইটিং হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মানসিক চাপ বাড়ার ফলে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়।

উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, হতাশা, অন্য কোনো মানসিক সমস্যা, দুঃশ্চিন্তা থেকে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। যখন স্ট্রেস বা তীব্র মানসিক চাপ তৈরি হয় তখন সেই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি কখনো কখনো স্ট্রেস ইটিংয়ের আশ্রয় নেন।

স্ট্রেস ইটিং এক ধরনের কোপিং ম্যাকানিজম, কোপিং মানে মানিয়ে চলার একটি প্রক্রিয়া। যেখানে খাদ্য গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানসিক চাপ কমাতে চান, খেয়ে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ দমন করতে চান। স্ট্রেস ইটিং যা ইমোশনাল ইটিং নামেও পরিচিত।

শরীরে কিছু স্ট্রেস হরমোন আছে, যেমন- অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন এপিনেফ্রিন, নর-এপিনেফ্রিন। যখন মানসিক চাপ বাড়ে তখন শরীরে বিভিন্ন স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় এবং স্ট্রেস হরমোন খাবারের চাহিদা বা ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। খাদ্য গ্রহণ করা, খাবার কেনার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি তার মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করেন।

স্ট্রেস ইটিং সাধারণত যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এটি নারীদের মধ্যে বেশি এবং শৈশব ও কৈশোরে এর প্রার্দুভাব বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ

১. তীব্র মানসিক চাপ, হতাশা, বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা থাকা।

২. অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খাওয়া।

৩. ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, সামনে যা আছে তাই খাওয়ার প্রবণতা, বিশেষ করে ফাস্টফুডে আসক্তি।

৪. একবার খাওয়ার পর আবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

৫. বার বার খাবার খাওয়ার কারণে বমিও হতে পারে, সেই কারণে বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডারে অল্প সময়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা হয় এবং খাওয়ার পর বমি করতে হয়।

৬. খাবার খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যায়।

চিকিৎসা

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, স্ট্রেস ইটিংয়ের চিকিৎসা হিসেবে প্রথমত যে কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে, হতাশা, উদ্বেগ হচ্ছে তার প্রাথমিক কারণ শনাক্ত করে চিকিৎসা করতে হবে। উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা কমানোর জন্য অ্যানজাইওলাইটিক ওষুধ দিতে হবে রোগীকে, কাউন্সিলিং করতে হবে। খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার জন্য বিহেভিয়ার থেরাপি আছে সেগুলো দিতে হবে। আচরণজনিত চিকিৎসা সেগুলো করানো এবং খাদ্য গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে গেলে খাদ্যের যে তালিকা সেটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। যেসব খাবার ওজন বাড়ায়, চিনি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড সেগুলো বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বজায় রাখতে হবে।

একদিকে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং আরেক দিকে মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, হতাশা নিয়ন্ত্রণ এই দুই প্রক্রিয়ায় স্ট্রেস ইটিংয়ের চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে।

প্রতিরোধ

স্ট্রেস ইটিং আগে থেকে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা থাকলে স্ট্রেস প্রতিরোধ করা যায়। তখন উদ্বেগ, বিষণ্নতা এই সমস্যাগুলো কম হয় এবং স্ট্রেস ইটিং প্রতিরোধ করা যায়।

এ ছাড়া মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতার সমস্যা যদি দ্রুত শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা করা যায় তাহলে স্ট্রেস ইটিং হওয়ার আগেই প্রতিরোধ সম্ভব।

স্ট্রেস কোপিং করার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে, খাদ্য গ্রহণ করে বা ইমোশনাল ইটিং হচ্ছে একটি পদ্ধতি। এর বাইরেও ইতিবাচক পদ্ধতি আছে। যেমন- রিলাক্সেশন থেরাপি, ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা, ব্যায়াম, হাঁটাচলা করা, গান শোনা এগুলোর মাধ্যমে সঠিক উপায়ে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে পারলে খাদ্য গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হবে না।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago