যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ

তৈরি পোশাক
ছবি: সংগৃহীত

অনুকূল শুল্ক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি গত জানুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশটি থেকে প্রচুর কার্যাদেশ আসায় এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত জানুয়ারিতে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য বলছে—গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৯৯ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার।

রপ্তানিকারকরা বলছেন—ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের জন্য সুবিধা তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছিলেন—নির্বাচিত হলে চীন, মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করবেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দেন। গত মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ আছে।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্ব থেকে সাত দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, ভারতের রপ্তানি ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৪৭৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৪১৯ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়ার রপ্তানি ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৩২৪ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার ও মেক্সিকোর রপ্তানি এক দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে ১৯৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার।

পাকিস্তানের রপ্তানি সাড়ে ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৭৯ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি পাঁচ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ওটেক্সার তথ্য বলছে—হন্ডুরাসের রপ্তানি ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ কমে হয়েছে ১১২ দশমিক শূন্য দুই মিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই প্রবৃদ্ধি টেকসই ও অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা গুরুত্বপূর্ণ যে ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে আগের বছরের তুলনায় পোশাক রপ্তানি পাঁচ শতাংশ কমেছে।'

বাংলাদেশের ওভেন পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ১১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। রপ্তানি ১২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ফারুক হাসান আরও বলেন, 'আমরা যখন এসব অর্জনের উদযাপন করছি, তখন মাসভিত্তিক বিশ্লেষণ কিছু চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পর আমরা গত জানুয়ারিতে মন্দা দেখেছি। ফেব্রুয়ারিতেও তা ছিল।'

গত ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি তিন দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি এক দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ওভেন রপ্তানি শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। নিটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ।

'যখন সামনের দিকে তাকাই তখন ভালোমন্দ দুটোই দেখতে পাই। সম্ভাবনা ও সংকট দুটোই আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Is the US winning under Donald 'Tariff' Trump?

President Trump has now been president for almost 100 days.

4h ago