কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় যে কথাগুলো এড়িয়ে চলবেন

সান্ত্বনা
ছবি: সংগৃহীত

ধরুন, আপনার পরিচিত কারো সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটেছে এবং আপনি তার পাশে থাকার জন্য সান্ত্বনা দিতে গেছেন। কিন্তু তার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আপনি সান্ত্বনাবাক্য হিসেবে এমন কিছু কথা বলে ফেললেন, যাতে মানসিক অবস্থা ভালো হওয়ার বদলে তিনি আরও দমে গেলেন। এমনটা যাতে না হয়, সেজন্য কিছু তথাকথিত সান্ত্বনাবাক্য এড়িয়ে চলা জরুরি।

`সব ঠিক হয়ে যাবে'

আচ্ছা, আপনি কি নিশ্চিত যে সব আসলেই ঠিক হয়ে যাবে? মাঝে মাঝে বলার জন্য আমরা একথা প্রায়ই বলি। আশাবাদী হওয়াটা খারাপ নয়, কিন্তু কেউ যখন খুব বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন— তখন কখনো কখনো তাকে এই কথাটি বলার অর্থ হচ্ছে মিথ্যা আশা দেওয়া। আশা মানুষকে বাঁচিয়ে দেয়, আর মিথ্যা আশা মানুষের জীবনীশক্তিকে ক্ষয় করে দেয়। তাই সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষেত্রে হলেও মিথ্যেটা না বললে দুই পক্ষের জন্যই ভালো।

'আমি আপনার তোমার অবস্থাটা বুঝতে পারছি'

এই কথাটা কি খুব পরিচিত লাগছে? অনেকে অনেকবার হয়তো আপনার খারাপ অবস্থাতেও এই কথাটি আওড়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আপনি ভেতরে ভেতরে দমে গিয়ে ভেবেছেন— আদতে কেউই আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন না। আসলে একেকজন ব্যক্তির জীবনের যাত্রাগুলো এতটাই বেশি আলাদা ও নির্দিষ্ট যে, চট করে তার ভেতর ও বাইরের সবকিছু বোঝা সম্ভব নয়। আর ঠিক সেভাবেই সম্ভব নয় তার অবস্থা বোঝা। হতে পারে কেউ তার প্রিয় ব্যক্তি হারিয়েছেন। আপনি ভাবলেন, আপনার সঙ্গেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে— তাই আপনিও তার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু বিষয়টা অত সহজ নয়। কারণ আপনাদের দুজনের জীবনের গল্পটা একেবারে আলাদা। আলাদা আপনাদের সম্পর্ক সামলানোর নিয়মকানুনও। তাই কারো অবস্থা বোঝার দাবি না করে, তার অবস্থা সম্পর্কে তিনি যতটুকু বলতে চান, সেটি মন দিয়ে শুনুন। এতে বরং সাহায্য হবে বেশি।

'যা হয় ভালোর জন্যই হয়'

জীবন কখনো কখনো খুব নিষ্ঠুর আচরণ করে। এ নিষ্ঠুরতায় বৈষম্যের শতভাগ জায়গা রয়েছে। বহুবার বহু ভালো মানুষের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটে এবং খারাপ কাজ করা লোকেরা পার পেয়ে যান। তাই যা হয়, সবসময় তা ভালোর জন্য হয় না। ওটা একটা ডাহা মিথ্যে আশ্বাস, ডুবন্ত লোকেদের কল্পিত খড়কুটো আর মরুভূমিতে হেঁটে বেড়ানো নিঃসঙ্গ পথচারীর চোখে দেখা মরীচিকা ছাড়া কিছুই নয়।

'দুশ্চিন্তা করো না, খুশি থাকো'

এ ধরনের কথার জন্ম সাধারণত টক্সিক পজিটিভিটি থেকে আসে। ভালো ভাবলেই ভালো হবে, মুখে হাসি ধরে রাখলেই মনের সব দুঃখ চলে যাবে ধরনের বহু আরোপিত ভাবনা থেকে এর জন্ম। এ ধরনের কথা বলে দুঃখকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবেন অনেকেই, কিন্তু তারা হয়তো ভুলে যান— মানবজীবনে দুঃখ, শোক খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এগুলোর অস্তিত্ব নাকচ করে শুধুমাত্র অতি-ইতিবাচক হয়ে নিজের স্বাভাবিক আবেগীয় প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটালে কখনো না কখনো তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

'আরে, অমুকের সঙ্গেও এমনটাই হয়েছে!'

একটি দুর্ঘটনা কিংবা শোককে অন্য আরেকজন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিচিত কারো সঙ্গে মিলিয়ে বিষয়টিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হালকা করে দেওয়ার একটা প্রবণতা ছাপা আছে এই কথাটিতে। এটি কোনোভাবেই শোকগ্রস্ত ব্যক্তিটির জন্য আরামদায়ক নয়।

'অনেকে তোমার চেয়েও খারাপ আছে'

তুলনা— একটি মানুষের সমগ্র জীবনটাকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে সক্ষম। তুলনা দেওয়ার মানেই হচ্ছে, আপনাকে একটা ইতোমধ্যে বিদ্যমান মাপকাঠিতে পরিমাপ করা হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অন্যে খারাপ আছে বলে যে আপনাকেও খারাপই থাকতে হবে, বা এর মাধ্যমে আপনার খারাপ থাকাটা ন্যায্যতা পাচ্ছে— এমন বহু ভুলে ঘেরা এই সান্ত্বনাবাক্যটি আদতে সান্ত্বনার বদলে অস্বস্তিই বেশি দেয়।

'তোমার আসলে যা করা দরকার…'

পরামর্শ তখনই দিন, যখন কেউ তা আপনার কাছে চায়। পরামর্শ এমনভাবেই দিন, যাতে সামনে থাকা ব্যক্তিটির আপনার কাছে মাথা না নোয়াতে হয়। কোনো শোকগ্রস্ত ব্যক্তিকে পরামর্শের মোড়কে আদেশ দেওয়াটা তার জন্য বেশ ক্ষতিকর। এতে করে তার আত্মবিশ্বাস, নিজের প্রতি ধারণা সবই নিম্নগামী হতে পারে। কারণ শোকগ্রস্ত অবস্থায় মানুষের মন দুর্বল থাকে। সম্ভব হলে তাই এহেন অবস্থায় কারো দুর্বলতা বাড়িয়ে না দিয়ে তার মনটাকে সবল করতে সাহায্য করুন।

 

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

12h ago