হামজা কি বাংলাদেশের 'ছেত্রী অভিশাপ' দূর করতে পারবেন?

আবারো সেই পরিচিত এবং কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ সামনে রেখে অবসর ভেঙে ফিরে আসা ভারতের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীকে থামানো। ফিরেই সম্প্রতি মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে নিজের আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যা ৯৫-এ নিয়ে গেছেন তিনি, যা সর্বকালের তালিকায় চতুর্থ সর্বোচ্চ।

আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ শুধুমাত্র আরেকটি বাছাইপর্বের খেলা নয়, এটি একদিকে নবজাগরিত বাংলাদেশের লড়াই, অন্যদিকে সেই খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে যিনি বারবার তাদের দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য।

তবে এবার কাহিনীতে নতুন এক মোড় এসেছে—বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগে খেলা শেফিল্ড ইউনাইটেড মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।

ছেত্রী দুঃস্বপ্ন

সুনীল ছেত্রীর বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ভয়াবহ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ—এই তিনটি বড় প্রতিযোগিতাতেই তিনি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন। চার ম্যাচে ছয় গোল করে বাংলাদেশের জন্য এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন ৩৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার।

ছেত্রী বাংলাদেশকে প্রথম আঘাতটা দিয়েছিলেন ২০১৩ সালের সাফে। তার করা ৯৫তম মিনিটের নাটকীয় গোল ভারতকে ১-১ সমতায় ফিরিয়ে দেয়। এখানেই তার 'জাত খেলোয়াড়' হয়ে ওঠার ইঙ্গিত মিলেছিল।

পরের বছর, একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তিনি আবারও বাংলাদেশকে হতাশ করেন। ১৪ মিনিটে গোল করার পর অতিরিক্ত সময়ের (৯০+২ মিনিট) আরেকটি গোলে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। দারুণ লড়াই করেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। মূলত ছেত্রীর একক নৈপুণ্যই শেষ হাসি হাসে ভারত।

কিন্তু ছেত্রীর সবচেয়ে ভয়ানক পারফরম্যান্স আসে ২০২১ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। ম্যাচটি যখন ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল, তখন ৭৯তম মিনিটে গোল করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন এবং অতিরিক্ত সময়ের আরেকটি গোল তার আধিপত্য আরও দৃঢ় করেন। ২-০ ব্যবধানের সেই জয় ভারতের জন্য মূল্যবান হলেও বাংলাদেশের জন্য ছিল আরেকটি বেদনাদায়ক রাত।

এমনকি ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও গোলের খাতায় নাম লেখান ছেত্রী। ২৬তম মিনিটে তার গোল ম্যাচকে ১-১ সমতায় নিয়ে যায়। সংক্ষেপে বলা যায়, ভারত বনাম বাংলাদেশ মানেই ছেত্রীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।

হামজার আগমন

এবার, যখন বাংলাদেশ আবারো তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ, তখন তাদের আশা জাগাচ্ছেন হামজা চৌধুরী। লেস্টার সিটির হয়ে খেলা এই মিডফিল্ডার বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে খেলছেন এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে যোগ দেওয়া নতুন এক আশার সঞ্চার করেছে।

প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতা কৌশলগতভাবে এগিয়ে রাখে হামজাকে এবং শারীরিক শক্তিমত্তাও যোগ করে, যা অতীতে বড় ম্যাচগুলোতে এই অভাব অনুভব করেছিল বাংলাদেশ। তার খেলার ছন্দ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা, প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করার সামর্থ্য এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আক্রমণ—বিশেষ করে ছেত্রীকে—নিরপেক্ষ করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ছেত্রীকে থামানো সহজ কাজ নয়, তবে হামজার উপস্থিতি ম্যাচে এক অনিশ্চিত নতুন মাত্রা যোগ করছে। মাঝমাঠে তার শৃঙ্খলাবদ্ধ পারফরম্যান্স ভারতের মূল গোল সরবরাহর লাইন কেটে দিতে পারে এবং এক দশকেরও বেশি সময় পর হয়তো প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ 'ছেত্রী অভিশাপ' থেকে মুক্তি পেতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য ছেত্রী এক দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের নাম। তবে হামজা দলে থাকায় এবার হয়তো চিত্রনাট্য বদলাবে। ২৫ মার্চ শুধুই বাছাইপর্বের ম্যাচ নয়, এটি হবে এক যুগান্তকারী লড়াই—বাংলাদেশ কি পারবে 'ছেত্রী অভিশাপ' থেকে মুক্ত হতে এবং এক নতুন যুগের সূচনা করতে, যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক প্রিমিয়ার লিগ তারকা?

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago