যেভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তামিম

টসের সময় ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের সঙ্গে তামিম ইকবাল। ছবি: স্টার

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তামিম ইকবালের জ্ঞান ফিরেছে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের হার্টে রিং পরানো হয়েছে। শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন।

সোমবার সকালে বিকেএসপিতে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন মোহামেডানের ওপেনার তামিম অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সাভারের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনিরুজ্জামান মারুফ।

ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল সকাল থেকেই দেখেছেন তামিমের অসুস্থতা ও পরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রমের পুরোটা। দুপুরে গণমাধ্যমকে তিনি জানান নিজের অভিজ্ঞতা, 'আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, আজকের ব্যাপারটা কিন্তু অকল্পনীয়। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন কাজ করছি, নিজে ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু আজকের মতো এরকম ঘটনা আমার পুরো ক্যারিয়ারে ঘটেনি।

সকালে টস করলাম। দুই দলের অধিনায়ক তামিম আসলো, রাফসান (রায়ান রাফসান রহমান) আসলো। টস করে সাধারণত অধিনায়করা চলে যায়। তবে গতকাল আমাদের একটি মিটিং ছিল, সেই প্রেক্ষিতে আমরা প্রায় তিন-চার মিনিট কথা বলি। এরপর ও ড্রেসিং রুমে চলে যায়, আমি আমার দায়িত্বে ফিরি। ম্যাচও শুরু হয়ে যায়। ম্যাচ শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট পর এনাম (মোহামেডানের ফিজিও) আমাকে ফোন করে বলে, "তামিম বুকে ব্যথা অনুভব করছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাই।" মাঠে অ্যাম্বুলেন্স ছিল, তামিমের ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তামিম গাড়িতে উঠে হাসপাতালে চলে যায়। আমিও তাকে সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি দিলাম।

তো ও হাসপাতালে চলে যাওয়ার পর আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম। ও বলছিল, "সবকিছু ভালো আছে।" সেখানে ডাক্তাররা তার ইসিজি করান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। ট্রিটমেন্টের পর ডাক্তাররা তাকে বলেছিল সেখানে কিছু সময় থাকার জন্য। তবে তামিম নিজেই বলছিল, সে ঢাকায় ফিরতে চায়।

ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা যখন হয়, তখন সে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং হেলিকপ্টার আনার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন আমি ছিলাম মাঠে। তামিমের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়া বিকেএসপির ডাক্তার ও ডালিমের (ট্রেনার) সঙ্গে আমার যোগাযোগ হচ্ছিল। আমাকে মোহামেডানের ম্যানেজার শিপন ভাই (সাজ্জাদ আহমেদ শিপন) জানান, হেলিকপ্টার আসছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম বিকেএসপির এক নম্বর মাঠের দিকে। হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার পর (তামিমকে বহনকারী) অ্যাম্বুলেন্স গেল, পেছনে আমার গাড়ি ছিল।

তখন কোনো কথা বলা তো দূরের ব্যাপার, তামিমের জ্ঞানও ছিল না। একেবারে অচেতন অবস্থা। আমরা খুব ভড়কে যাই যে, হেলিকপ্টারে তুলব নাকি গাড়িতেই রাখব। তখনকার দৃশ্যটা এরকম, ডালিম ওর বুকে চাপ দিচ্ছিল, ওর মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছিল, পালস (নাড়ির স্পন্দন) নাই।

কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত সেটা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যেতে অনে সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে তামিম ট্রিটমেন্ট মিস করবে। গুরুতর কিছু হয়ে যেতে পারে। বরং এই কেপিজি হাসপাতালে ফেরত নিয়ে যাওয়া উচিত। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের। আমরা এখানে চলে আসি। আসার পথে কোনো জ্যাম ছিল না রাস্তায়। একইসঙ্গে ডাক্তার ও ডালিম তামিমের বুকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুই হচ্ছিল না। পৌঁছানোর এক মিনিট আগে আমাকে বলা হলো, একটু মনে হয় রেস্পন্স পাওয়া যাচ্ছে।

আমাদের পুরো মনোযোগ তখন কত দ্রুত আমরা হাসপাতালে আসব সেটার দিকে। ড্রাইভারের সহায়তায় আমরা চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে এখানে পৌঁছে গেছি। এর মধ্যেই আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতিকে (ফারুক আহমেদ) বিষয়টা জানাই। আর যেহেতু আমি ম্যাচ রেফারি, তাই সিইওর (নিজামউদ্দিন চৌধুরী) সঙ্গেও কথা বলি। তাকে বলি, হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য, যাতে আমরা এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রিটমেন্ট পাই।

সৃষ্টিকর্তা সবকিছুর সমন্বয় করে দিয়েছেন। আসার পর দেখি, এখানে ডাক্তারদের একটি দল তৈরি। তামিমকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলো, চিকিৎসা দেওয়া হলো। সম্ভবত তাকে লাইফ সাপোর্টেও নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি তো শুরু থেকে ছিলাম, ডাক্তাররা সবকিছু দ্রুততার সঙ্গে করেছেন খুব ভালোভাবে।

এনজিওগ্রাম করানোর সময় তামিমের পক্ষ থেকে একজনকে যে স্বাক্ষর করতে হয়েছে, সেটা আমিই করেছি। এর মধ্যে আমি নাফিসের (তামিমের ভাই নাফিস ইকবাল), আকরাম ভাইয়ের (তামিমের চাচা আকরাম খান) ও ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আমাকে স্বাক্ষর করতে। বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর সঙ্গে এই হাসপাতালের ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন, জানিয়েছেন তামিমকে কী ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।

এই সার্বিক সমন্বয় ও মুহূর্তের মধ্যে যথাযথ সিদ্ধান্ত মিলিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সবার সহযোগিতায় তামিম এখন পর্যন্ত বর্তমান অবস্থায় আছে।'

সকালে সাভারের বিকেএসপিতে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে যান তামিম। মোহামেডানের অধিনায়ক হিসেবে টসও করেন তিনি। এরপর খেলতে নেমে কিছুক্ষণ পর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন।

তৎক্ষণাৎ স্থানীয় কেপিজে হাসপাতালে যাওয়ার পর মাঠে ফিরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু সেখানে থাকা চিকিৎসকরা তখন দ্রুত আগের ওই হাসপাতালেই তার চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

6h ago