গ্যালারিতে পানির জন্য হাহাকার

টিকিটের জন্য অনলাইনে যুদ্ধ করে এক দফা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়েছেন দেশের ফুটবল সমর্থকরা। এবার তারা শারীরিক ক্লান্তিও উপহার পেলেন বাফুফের দুর্বল ব্যবস্থাপনায়। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এক পর্যায়ে আধা লিটারের এক বোতল পানির মূল্য হাঁকা হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৫০০ টাকা। আর সেটাও যেন সোনার হরিণ। পানি কিনতে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়েছে সমর্থকদের।
হামজা চৌধুরী, শমিত সোমসহ বেশ কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলার বাংলাদেশ জাতীয় দলে যোগ হওয়ায় এই অঙ্গনে যেন নতুন জোয়ার উঠেছে। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গ্যালারি পূর্ণ হয়ে যায় বিকাল ৩টার মধ্যেই। মাঝে এক পশলা বৃষ্টি এলেও সমর্থকদের উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় স্বস্তি মেলেনি দেশের ফুটবল ভক্তদের।
এদিন স্টেডিয়ামের গেট খোলা হয় দুপুর ২টায়। বাইরে তখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সমর্থকরা। সূর্য তখন মাঝে আকাশে তেতে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থেকে পানির বোতল কেনা গেলেও তা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য এই ঘোষণা আগে থেকেই ছিল। তারপরও গরমের কথা ভেবে অনেকেই কিনেছেন। সেসময় বাইরে থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ভেতরে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। শুরুতে ছিলও, কিন্তু বেজায় দাম। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেই পানির সরবরাহও শেষ। এরপর মাঝেমধ্যে দুই-এক কেস পানি মিললেও তার দাম বেড়ে যায় আরও। এক পর্যায়ে আর পাওয়াই যায়নি।
এমনিতেই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে জনজীবন অতিষ্ঠ, ঠিক তখন যদি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানি না পাওয়া যায়, তাতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রুদ্ধ হবেন সমর্থকরা। অনেকে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন বড় ম্যাচে কীভাবে এমন প্রাথমিক চাহিদার ব্যবস্থা করা হয় না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
ইমরান নামে এক সমর্থক এসেছেন সুদুর কুমিল্লা থেকে। কুমিল্লা পলিটেকনিকের এই ছাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি পানি কিনতে কয়েকবার এসেছি। কিন্তু পাইনি। এবার যখন পেলাম তখন ৫ লিটার বোতলের পানি চেয়েছে ৩০০টাকা। আমি বললাম, "৮০ টাকার পানি এত দাম চাইছেন কেন?" তাতে এক পর্যায়ে উল্টো তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। শুরুতে কয়েকজন প্রতি গ্লাস পানি ১০ টাকায় বিক্রি করেছে, এখন সেটা নেই।'
একইসঙ্গে হতাশাও প্রকাশ করে আরও বলেন, 'আমি দাম কিছু কমাতে বলছিলাম, কিন্তু কয়েকজন ৩০০ টাকাতেই কিনে নিয়েছে। এখন সেটাও নাই। এখন খুব তৃষ্ণার্ত। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অবশ্যই এসব বিষয়ে খেয়াল রাখার দরকার ছিল। এখানে দিনে-দুপুরে ডাকাতি হচ্ছে।'
প্রায় একই সুরে কথা বলেন বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করা নীরব, 'ভাই, একটা চিপসের প্যাকেট ৫০ টাকা যার, আসল মূল্য ২০টাকা। পানি তো আমি পাই নাই। ঢোকার পর দুই গ্লাস পানি ২০ টাকায় দুই বন্ধু খেয়েছি। কিন্তু এখন সেটাও নাই। এটা কেমন কথা!'
নীরব যখন তার অভিযোগ জানান, ঠিক তখনই একজন মাথায় করে এক কেস পানি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। মুহূর্তেই তার পেছনে বিশাল লাইন। নির্দিষ্ট কর্নারে যখন তিনি পৌঁছান, তখন প্রতি আধা লিটার পানির বোতলের দাম হাঁকানো হয় ৫০ টাকা। কিন্তু তাও কয়েক সেকেন্ড যেতেই শেষ। এরপর অপেক্ষায় ছিলেন অনেক দর্শক। এরমধ্যেই কয়েকজন দর্শক জানান, তারা ১০০ টাকা দিয়েছেন, কিন্তু বোতল পেয়েছেন একটি।
এরপর পানি নিয়ে মারামারি ও বোতল কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থাপনায় ভুক্তভোগী হয়েছেন ভক্ত-সমর্থকরা।
Comments