ইবিআরসি গণহত্যা: নৃশংসতা ও বর্বরতার ইতিবৃত্ত

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার গণহত্যায় শহীদ সেনাদের সমাধি। ছবি: সংগৃহীত

২৫ মার্চ ১৯৭১। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ভয়াল কালরাত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা সহ সমগ্র দেশব্যাপী পৈশাচিক গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। গণহত্যার শুরুতেই পাকিস্তানি বাহিনী যে সকল প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার।

মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম তার 'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' গ্রন্থে লিখেছেন, ২৫ মার্চ রাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে অন্তত এক হাজারেরও বেশি বাঙালি সেনাকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যদিও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের নথিপত্রে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৫০-৬০০ বাঙালি সেনার নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে।

২৫ মার্চ রাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি যেসব বইয়ে উল্লেখ রয়েছে এর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (নবম খণ্ড), আমীন আহম্মদ চৌধুরীর '১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন', সুবিদ আলী ভূঁইয়ার 'মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস' উল্লেখযোগ্য।

১৯৪৮ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পদাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ইবিআরসিতে প্রশিক্ষণরত ছিলেন দেড় হাজারের বেশি বাঙালি সৈনিক।

প্রশিক্ষণার্থী বাঙালি সেনারা ছাড়া ইবিআরসিতে আরও কর্মরত ছিলেন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা ২০ বেলুচ রেজিমেন্ট। ইবিআরসির কমান্ড্যান্ট ছিলেন তৎকালীন সময়ে সর্বজ্যেষ্ঠ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার, আর প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মজিবুর রহমান চৌধুরী।

পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ১৯৭০ সালের জুন মাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুজিবুর রহমান চৌধুরী (পেছনে ডানদিকে)। তিনি ১৯৭১ সালে প্রথম শহীদ হওয়া বাঙালি কর্মকর্তা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্নেল কমান্ড্যান্ট (পেছনে মাঝখানে)। সৌজন্যে: কর্নেল (অব.) মাহমুদ উর রহমান চৌধুরী

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান থেকে আসা অস্ত্রবাহী জাহাজ 'সোয়াত' চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাকিস্তানি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমস্ত চাপ উপেক্ষা উপেক্ষা ও নির্দেশ অমান্য করে জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে অস্বীকৃতি জানান ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার।

এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র-গোলাবারুদ খালাস সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ২৪ মার্চ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদ খান, ১৪তম ডিভিশন প্রধান মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজা, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, ব্রিগেডিয়ার আনসারী প্রমুখ। তারা ২০ বেলুচের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাতেমীকে নিয়ে ইবিআরসি ও চট্টগ্রাম বন্দরে একাধিক গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে রাখা হয়নি ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে। বৈঠকে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের স্থলে অবাঙালি ব্রিগেডিয়ার আনসারীকে নিযুক্ত করা হয়। জেনারেলরা ফেরার সময় আলোচনার অজুহাতে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ইবিআরসির বাঙালি সেনারা।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে যা ঘটেছিল

২৫ মার্চ সকাল থেকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড স্থাপন করে সভা-সমাবেশ চলছিল। এদিন সকালে ব্রিগেডিয়ার আনসারী এম আর চৌধুরীকে ব্যারিকেড অপসারণের নির্দেশ দেন।

এদিন সন্ধ্যা থেকেই নানা অজুহাতে ইবিআরসির বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্রকরণ শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। সুবিদ আলী ভূঁইয়া তার 'মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস' গ্রন্থে লিখেছেন, 'সন্ধ্যে সাতটায় আমাদের জওয়ানদের সব রাইফেল অস্ত্রাগারে জমা নিয়ে নেওয়া হয়।'

স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র নবম খণ্ডে প্রকাশিত ইবিআরসিতে কর্মরত ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরীর লেখা 'ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের ঘটনা ও প্রতিরোধ' নিবন্ধ সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টার দিকে অষ্টম বেঙ্গলের মেজর মীর শওকত আলী টেলিফোনে ইবিআরসির সমস্ত গাড়ি বন্দরে পাঠাতে বলেন। প্রতিকূল অবস্থা বুঝতে পেরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম আর চৌধুরী ক্যাপ্টেন এনামুলকে অস্ত্রাগার খুলে সমস্ত অস্ত্র বাঙালি জোয়ানদের বিতরণ করে সংগঠিত করার নির্দেশ দেন। ক্যাপ্টেন এনামুল অস্ত্রাগার খুলে বিতরণ করতেই আগমন ঘটে বেলুচ সেনাদের।

ক্যাপ্টেন এনামুল লিখেছেন, 'কোয়ার্টার গার্ড থেকে গার্ড কমান্ডার থেকে দৌড়ে এসে আমাকে বলে যে ২০ বেলুচের সমস্ত লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গাড়ি থেকে নামছে। …অল্পক্ষণের মধ্যে ২০ বেলুচের লোকেরা কোয়ার্টার গার্ডের রক্ষীদের উপর হামলা চালায়। মুহূর্তের মধ্যে চারদিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়।'

'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' ও 'মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ১১টায় ৬ ট্রাক বেলুচ সেনা অস্ত্রাগারের সামনে বাঙালি সেনাদের হত্যা করে অস্ত্রাগারের দখল নিয়ে রিক্রুট ব্যারাক ঘিরে ফেলে। এরপরই শুরু করে সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এসময় ব্যারাকের বেশিরভাগ সেনাই ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় কোনো প্রতিরোধই গড়ে তোলার সুযোগ পায়নি। বেলুচ সেনাদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় রিক্রুট ব্যারাকের প্রতিটি কক্ষ।

একপর্যায়ে বেলুচ সেনারা ক্যাপ্টেন এনামকে গ্রেপ্তার করে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সে কক্ষে অনেক আহত বাঙালি সেনাদের আনা হয়েছিল। ক্যাপ্টেন এনাম লিখেছেন, 'সেখানে দেখতে পাই বাঙালি সৈনিকদের মৃত্যুর আর্তনাদ। কেউ পানির জন্য কাতরাচ্ছে। কেউ যন্ত্রণায় ছটফট করছে।…যারা মুমূর্ষু অবস্থায় ছটফট করছিল পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের গলার উপর বুট দিয়ে চেপে ধরেছে, যাতে তাড়াতাড়ি তারা মারা যায়।'

শেষরাতে ট্যাংক থেকে ব্যারাকের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে বেলুচ সেনারা। এসময় আহত সেনাদের আর্তনাদ ও গোঙ্গানিতে ভারী হয়ে উঠে ক্যান্টনমেন্টের চারপাশ। অনেক বাঙালি সেনাকে ইবিআরসির স্কুলে ঢুকিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনারা।

ক্যাপ্টেন এনাম লিখেছেন, '২৬শে মার্চ সকাল ৭টার দিকে পাক সৈন্যরা যেসব লোকদেরকে রাত্রে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছিল তাদেরকে একটি ট্রাকে ভর্তি করতে দেখতে পাই। আমার সামনে দিয়েও শ' খানেকেরও উপর লাশ নিয়ে যেতে দেখতে পাই।'

মেজর রফিক তার লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' গ্রন্থে লিখেছেন 'বেলুচ সৈন্যরা অস্ত্রের মুখে যাকে পায় তাকেই হত্যা করতে থাকে। নারী ও শিশুদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।'

২৫ মার্চ রাতে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম। অষ্টম বেঙ্গলের অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। সে রাতে ইবিআরসির বাঙালি সেনা অফিসারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাত ১০টার পর থেকে আমি ক্রমাগত কর্নেল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি। সকালে জানতে পারি, রাতেই তাকে ওরা হত্যা করেছে।'

ইবিআরসিতে আক্রান্ত সেনাদের সহায়তায় কেন অষ্টম বেঙ্গল যায়নি জানতে চাইলে কর্নেল অলি বলেন, 'একদিকে আমাদের অস্ত্র-গোলাবারুদের সীমাবদ্ধতা ছিল। আমাদের ব্যাটেলিয়নের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা থাকায় অনেকে ছুটিতেও ছিল। ২০ বেলুচ সম্পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। আমরা যদি যেতাম তাহলে সেটা আত্মঘাতী হতো। ইবিআরসির ব্যারাকের সাথেই পাহাড় ছিল, ওরা পাহাড়ে উঠতে পারলেই বেঁচে যেত।'

আক্রমণের শুরুতেই বেলুচ সেনারা ইবিআরসির প্রধান প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম আর চৌধুরীকে হত্যা করেছিল। তার ছেলে কর্নেল (অব.) মাহমুদুর রহমান চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এম আর চৌধুরী তখন অফিসার্স মেস থেকে বের হয়ে ইবিআরসিতে ঢুকছিলেন এমন সময়ে বেলুচ রেজিমেন্টের একটা প্লাটুন তাকে গুলি করে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে।'

২৫ মার্চ গণহত্যার আড়াই মাস আগেই একাত্তরের জানুয়ারি মাস থেকে চট্টগ্রামে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মজিবুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গী ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার, মেজর জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ প্রমুখ। জানুয়ারি মাস থেকে গোপনে বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে একাধিক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিতও হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। ২৫ মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য ঢাকায় নানামুখী যোগাযোগ করেছিলেন চট্টগ্রামের বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনৈতিক সমাধান চাওয়ায় শেষ মুহূর্তেও তা আর সম্ভব হয়নি।

মাহমুদুর রহমান চৌধুরী এই বিষয়ে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই যদি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী হতেন তাহলে সেদিন এই ম্যাসাকারটা হতোনা। মুক্তিযুদ্ধে এতো বিপুল প্রাণহানিও ঘটতো না। অন্যদিকে ২৫ মার্চ রাতে আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে এম আর চৌধুরী দুর্ভাগ্যজনকভাবে শহীদ না হলে বাঙালি সেনাদের নিয়ে অন্তত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতেন। কারণ তার অবর্তমানে প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেয়ার মতো আর কোনো অফিসার অবশিষ্ট ছিলেন না।'

ইবিআরসি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজে

২৫ মার্চ রাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের বেশিরভাগ বাঙালি সেনাই শহীদ হয়েছিলেন। গণহত্যায় ভাগ্যক্রমে যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সেসব বাঙালি সেনাদের বিষয়ে কয়েক দফায় খোঁজ করেছিলেন ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক। অনুসন্ধানের প্রথম পর্যায়ে এই প্রতিবেদক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা সে রাতে ইবিআরসিতে কর্মরত বা প্রশিক্ষণরত ছিলেন তাদের তালিকা করেন। তবে দেখা যায়, এদের মধ্যে বর্তমানে কেউই জীবিত নেই।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এই প্রতিবেদক স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এমন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যারা সেদিন রাতে ইবিআরসির গণহত্যা থেকে ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাঙালি সেনাদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, আশ্রয় দিয়েছিলেন বা চিকিৎসা করেছিলেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা ডা. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে খন্দকিয়া গ্রামের দূরত্ব তিন কিলোমিটার।

কামাল উদ্দিন বলেন, '২৫ মার্চ রাতে ক্যান্টনমেন্টে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। পরদিন ভোরে বড় দিঘির পাড়ে এসে আমরা কয়েকজন লোককে দেখতে পাই। এদের সবার গায়ের, পরনের কাপড় ছেঁড়া। কারো কারো শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। দেখে চেনার উপায় নেই যে এরা সৈনিক। ওরা আমাদের বলল সন্ধ্যায় তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল। গোলাগুলি শুরুর একপর্যায়ে কোন রকমে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে তারা পালিয়েছে।' আমরা ওদের আশ্রয় দিতে চাইলেও ওরা এতোটাই আতঙ্কিত ছিল যে কোনভাবে যেন পালাতে পারলেই বাঁচে।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হাটহাজারীর বটতলী গ্রামের বাসিন্দা দিদারুল আলমের। তিনি বলেন, 'অল্প কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পরিবার ছিল, মেয়েরা পাকিস্তানিদের বারবার গালি দিচ্ছিল আর বলছিল, ওরা বলতো আমরা নাকি ওদের ভাই। ভাই হলে কীভাবে মারতে পেরেছে। ওরা এও বলছিল, আমরা অল্প কয়েকজন বাঁচতে পেরেছি। যারা ঘুমিয়েছিল তাদের হয়তো একজনও বাঁচতে পারেনি।

একাত্তরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ছিলেন ডা. মঈনুল আহসান। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস। ২৫ মার্চ ইবিআরসিতে গণহত্যার পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, '২৬ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গুলিতে গুরুতর আহত যেসব রোগী এসেছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত গুলিবিদ্ধ বাঙালি সেনা। একপর্যায়ে আহতদের চিকিৎসা দিতে আমরা ডাক্তারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদেরকে হাসপাতালে এনেছি। পরবর্তী দুদিন আমরা এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম নিতে পারিনি। একের পর এক অপারেশন করতে হয়েছে।'

চট্টগ্রাম মেডিকেলে আগত গুলিবিদ্ধ বাঙালি সেনাদের কারো সঙ্গেই পরিবারের সদস্যরা ছিলেন না বলে জানান ডা. মঈনুল। একইসঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে প্রাণে বাঁচতে পারলেও পরে হাসপাতালে আসার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানান এই চিকিৎসক।

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

3h ago