সুযোগ নষ্টের মহড়া দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ড্র

ছবি: বাফুফে

খেলা শুরুর বাঁশি বাজার কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতের গোলরক্ষকের ভুলে সুযোগ মিলল বাংলাদেশের। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে তা লুফে নিতে পারলেন না মজিবুর রহমান জনি। জমজমাট লড়াইয়ের বাকি সময়েও সব মিলিয়ে আক্রমণে দাপট দেখাল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় কাঙ্ক্ষিত গোলের স্বাদ অধরা রইল তাদের। যদিও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ডেরা থেকে এক পয়েন্ট আদায় করে ফিরল হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।

মঙ্গলবার শিলংয়ে ২০২৭ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের 'সি' গ্রুপের ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে রীতিমতো সুযোগ নষ্টের মহড়া দেয় ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ। ২০ মিনিটের মধ্যে চারবার গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায় ভারত।

অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের তারকা হামজা চৌধুরীর পারফরম্যান্সে ছিল দৃঢ়তা। মাঠে ছিল শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের সরব উপস্থিতি। সতীর্থদের বল যোগান দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীকে চোখে চোখে রেখে হতে দেননি মাথাব্যথার কারণ।

ছবি: বাফুফে

ম্যাচ শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মেলে বাংলাদেশের। ভারতের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ গোলপোস্ট ছেড়ে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন জনির পায়ে। কিন্তু বাংলাদেশের মিডফিল্ডার করেন হতাশ। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও ডি-বক্সের ভেতরে ডানদিক থেকে জালের বাইরের দিকে শট মারেন তিনি।

নবম মিনিটে আরও একবার সুযোগ হাতছাড়া করে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। উইঙ্গার শেখ মোরসালিনের ক্রসে বক্সে ফাঁকায় থাকা আরেক উইঙ্গার শাহরিয়ার ইমনের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় পোস্ট ঘেঁষে।

১৫তম মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় সফরকারীদের। মিডফিল্ডার হামজার কর্নার কিকের পর বল লুফে নেন কাইথ। ভারতের গোলরক্ষক কিক নিলে সামনে থাকা ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপুর গায়ে লেগে বল চলে যায় পেছনে। বক্সের বাম দিকে ফাঁকা পোস্টের সামনে বল পান মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়। তার গড়ানো দুর্বল শট গোললাইনে আটকে যায় ডিফেন্ডার শুভাশীষ বোসের পায়ে।

দুই মিনিট পর বামপ্রান্ত থেকে মোরসালিন করেন নিখুঁত ক্রস। ভারতের ডি-বক্সে একদম অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন ইমন। কিন্তু বলে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতেই পারেননি তিনি। আরেক দফা আক্ষেপে পুড়তে হয় বাংলাদেশকে।

একগাদা সুযোগ হারানোর পর ২১তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন আরেক ডিফেন্ডার রহমত মিয়া।

আক্রমণের তোড় সামলে এরপর ধীরেধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করে ভারত। ২৭তম মিনিটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের গোলমুখে শট নেয় তারা। মিডফিল্ডার লিস্টন কোলাচোর ভলি সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। চার মিনিট পর তার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। বামপ্রান্ত থেকে কোলাচোর দূরের পোস্টে রাখা ক্রসে মিডফিল্ডার উদন্ত সিংয়ের হেড ফিরিয়ে দেন তিনি। আলগা বলে ফরোয়ার্ড ফারুখ চৌধুরীর শটও ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন মিতুল।

৪১তম মিনিটে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলেন জনি। বল পায়ে বক্সেও ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু মূল কাজই করতে ব্যর্থ হন। ভারতের গোলরক্ষককে একা পেয়েও শটই নিতে পারেননি তিনি। আরেকবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিকরা।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের খেলার গতি কমে যায়। উল্টো ভারত হয়ে ওঠে উজ্জীবিত। ৫৫তম মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন কোলাচো। বক্সে ছেত্রী লাফিয়ে উঠলেও বলের নাগাল পাননি।

৬১তম মিনিটে তৃতীয়বারের মতো ভুল করেন কাইথ। কিন্তু এবারও বাংলাদেশ পারেনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে। ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনের প্রেসিংয়ে ডি-বক্সে বিপাকে পড়ে যাওয়া ভারতের গোলরক্ষক বল তুলে দেন জনিকে। তিনি শুভাশীষকে কাটিয়ে শট বা ক্রস যেটাই করার চেষ্টা করেছিলেন না কেন, তাতে সফল হননি।

পরের মিনিটে দুটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশের কোচ কাবরেরা। জনি ও ইমনের জায়গায় বদলি হিসেবে মাঠে নামেন যথাক্রমে মিডফিল্ডার চন্দন রায় ও ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। কিছুক্ষণ পর সতীর্থের কর্নারের পর ছেত্রীর শট চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ৬৭তম মিনিটে শুভাশীষের দূরপাল্লার শট চলে যায় পোস্টের কাছ দিয়ে। ছয় মিনিট পর তার বুলেট গতির হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৭৮তম মিনিটে মোরসালিন ও হৃদয়কে তুলে নেওয়া হয়। তাদের জায়গায় ঢোকেন দুই মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেল ও সোহেল রানা। ৮৪তম মিনিটে ছেত্রীর দুর্বল হেড থাকেনি লক্ষ্যে। পরের মিনিটে তাকে বদলি করেন ভারতের কোচ মানোলো মার্কেজ।

নির্ধারিত সময়ের শেষদিকে সতীর্থের লং থ্রোয়ের পর বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন ফাহিম। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে তা ঠেকান কাইথ। অতিরিক্ত হিসেবে এরপর যোগ করা হয় পাঁচ মিনিট। চতুর্থ মিনিটে বক্সের বামদিকে দারুণভাবে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর শট নেন রাকিব। কিন্তু তা চলে যায় গোলপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। এতে বাংলাদেশের শেষ সুযোগটিও যায় বাতিলের খাতায়।

গোটা ম্যাচে গোলমুখে ১০টি শট নিয়ে দুটি পোস্টে রাখতে পারে ভারত। অন্যদিকে, বাংলাদেশের নেওয়া আটটি শটের তিনটি শট ছিল লক্ষ্যে। বাছাইয়ের ফিরতি ম্যাচে আগামী ১৮ নভেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে আসবে ভারত।

Comments

The Daily Star  | English

Govt bans AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

11m ago