মিয়ানমারের ভূমিকম্প ঢাকার জন্য সতর্কবার্তা

মিয়ানমারে সাগাইং ফল্ট লাইনের ওপর গতকাল ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হানার বিষয়টি ঢাকার জন্য কঠিন সতর্কবার্তা।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের অংশ হওয়ায় জরুরি প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে ঢাকার।
তারা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম টেকটোনিক সক্রিয় অঞ্চলে বাংলাদেশ অবস্থিত। এটি তিনটি টেকটোনিক প্লেট—ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
সাগাইং ফল্ট ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের অংশ, যেখানে বাংলাদেশও অবস্থান করছে।
গতকালের ভূমিকম্পগুলোর মাত্রা ৪.৫ থেকে ৭.৭ পর্যন্ত ছিল, যা মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ভবনের ক্ষতি করেছে এবং শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।
ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ভূমিকম্প ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনে ঘটেছে। সেখানে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তি জমা হচ্ছে এবং আমরা আশঙ্কা করছি, ওখানে ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে।'
তিনি বলেন, '৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে।'
তবে তিনি উল্লেখ করেন, গতকালের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ক্ষতি না হওয়ার কারণ হচ্ছে, সেগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল বার্মা প্লেটের উপর।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবায়েত কবির জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল, মিয়ানমার ও তিব্বতের আশপাশে অনেক ছোট ও বড় ভূমিকম্প হয়েছে।
তার গবেষণা অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ২৮টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪১ এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪-তে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই বেশকিছু ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। তবে তথ্য বলছে, ভূমিকম্পের সংখ্যাও বেড়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে খুবই মৃদু ভূমিকম্প নিয়মিত হয়। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, গত দশকে বাংলাদেশের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ৫৫০টি ভূমিকম্প হয়েছে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূমিকম্পগুলোর ধরণ বড় ধরনের কম্পনের ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের দাউকির মতো সক্রিয় ফল্ট লাইনের মতো এলাকায়।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল ১২৫ থেকে ১৭৫ বছর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ২৫০ থেকে ৩০০ বছর।
১৭৬২ সালে চট্টগ্রামে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৮৬৯ সালে চাছাড়ে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার বঙ্গ ভূমিকম্প, ১৮৯৭ সালে ৮.৭ মাত্রার ভারতের বিশাল ভূমিকম্প, ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯২৩ সালে দুর্গাপুরে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ১৯৩০ সালে ধুবরিতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'কাজেই, বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।'
ভূতাত্ত্বিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঢাকা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্প বিপর্যয় ঝুঁকি সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ২০টি সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা।
Comments