বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসির হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকগুলো

ছবি: স্টার

জীর্ণ-শীর্ণ একতলা ভবনের দেয়াল ভেঙে পড়ছে, জায়গায় জায়গায় খসে পড়েছে পলেস্তারা। মেঝে ক্ষয় হয়ে বেরিয়ে এসেছে ইট ও বালু। প্রবেশদ্বারের ওপরে ঝুলছে মরিচা ধরা সাইনবোর্ড, তারও অনেক জায়গা ক্ষয়ে গেছে। এমনই 'রোগাক্রান্ত' এক ক্লিনিকে বসে রোগীদের চিকিৎসা ও ওষুধ দিচ্ছেন চিকিৎসক।

এটাই সূত্রাপুরের দলপট্টি মোড়ে অবস্থিত ফরাশগঞ্জ হোমিওপ্যাথি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারির চিত্র। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) যে কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক পরিচালনা করে, এটি তার মধ্যে একটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ফাঁকা ধুলো জমা কাঠের শোকেস, চারটি জীর্ণ চেয়ার, একটি টেবিল, একটি স্টিলের আলমারি ও রোগীদের বসার জন্য একটিমাত্র বেঞ্চ। এক কথায় বললে, অল্প কয়েকটি পুরনো আসবাব রয়েছে সেখানে।

আলমারিতে রয়েছে ডিএসসিসির সরবরাহ করা ওষুধ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।

ক্লিনিকটির পরিস্থিতি একটা জরাজীর্ণ হলেও নিয়মিত রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে।

এই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. ফারজানা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একসময় এখানে কম্পাউন্ডার ও আয়া ছিল। কিন্তু এখন শুধু একজন নিরাপত্তারক্ষী আছে। আমি অবসরে গেলে এই ক্লিনিকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন করে আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে না।'

ফারজানা ২০০৫ সালে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগে যোগ দেন এবং তার পোস্টিং হয় এই ক্লিনিকে। তিনি জানান, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেই তিনি ৫০০ জনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এই চ্যারিটেবল হোমিওপ্যাথি কেন্দ্রগুলোর প্রচার নেই। প্রচার থাকলে আরও বেশি রোগী আসতেন।'

ডিএসসিসির আরেকটি হোমিওপ্যাথি কেন্দ্র রোকনপুর হোমিওপ্যাথি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি। জায়গা বদলে বর্তমানে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের ডিআইটি মার্কেটের তৃতীয় তলায় পরিচালিত হচ্ছে ক্লিনিকটি।

সেখানে কোচিং সেন্টারের ভিড়ে এই ক্লিনিক খুঁজে পাওয়াই এক চ্যালেঞ্জ।

ডিএসসিসির অধীনে আরও দুটি হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক রয়েছে— চকবাজারের কাটারা হোমিওপ্যাথি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি এবং লালবাগের সাত শহীদ হোমিওপ্যাথি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি।

অন্যদিকে, নাজিরাবাজার হোমিওপ্যাথি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসক ও কম্পাউন্ডার অবসরে চলে যাওয়ায়। বাকি চারটি ক্লিনিকও একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে।

২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর এসব হোমিওপ্যাথি ডিসপেনসারি ডিএসসিসির অধীনে আসে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে কোনো হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক নেই।

প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার রোগী এসব ক্লিনিকে চিকিৎসা নিলেও ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ এগুলোর প্রচারে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি।

এসব কেন্দ্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদান করে, তবে কোনো সার্জারি করা হয় না।

প্রতিটি ক্লিনিকে রয়েছেন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও একজন কম্পাউন্ডার। ডিএসসিসি এখানে ২৮ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করে। যদিও বাজেট সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ রাখতে পারে না। ফলে রোগীদের বাইরে থেকে বাড়তি ওষুধ কিনে নিতে হয়।

২০১৬ সালে ডিএসসিসি নতুন স্বাস্থ্য বিভাগীয় কাঠামোর অধীনে হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক সম্পর্কিত সব পদ বিলুপ্ত করে। চিকিৎসক ও কম্পাউন্ডারদের জানানো হয়, তাদের ক্লিনিক চালু থাকবে তারা অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত। তারা অবসরে যাওয়ার পর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।

এর ফলে নাজিরাবাজার ক্লিনিক ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে আট বছর আগে চিকিৎসক অবসর গ্রহণ করলে কম্পাউন্ডার একাই ক্লিনিক চালিয়ে যান। তিনিও ২০২৩ সালে অবসর নিলে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ক্লিনিকটি বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতি বছর বাজেট চূড়ান্ত করার আগে ডিএসসিসি হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকগুলোর জন্য তহবিল বাড়ানোর প্রস্তাব পায়। কিন্তু এসব প্রস্তাব হালে পানি পায় না। বর্তমানে হোমিওপ্যাথি ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ বাজেট বছরে মাত্র ২ লাখ টাকা।

বাকি চারটি হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি পরিদর্শন করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

লক্ষ্মীবাজারের ডিআইটি মার্কেটের তৃতীয় তলায় কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে রোকনপুর হোমিওপ্যাথি ডিসপেনসারি দেখে সেটাকে চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে চেনাই মুশকিল।

এই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, 'এই ক্লিনিকগুলো বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করে। কিন্তু ডিএসসিসি কর্মকর্তাদের এতে কোনো আগ্রহ নেই। আগে প্রতি বছর বাজেট ছিল ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এখন চারটি ক্লিনিকের জন্য মোট বাজেট মাত্র ২ লাখ টাকা। এই টাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না।'

ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন নিশ্চিত করেছেন, এই হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে, বর্তমান চিকিৎসকরা অবসর নেওয়ার পর তাদের পদ পূরণ করা হবে না এবং ডিসপেনসারিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো বন্ধ করছি না—এটি নীতিগত বিষয়।'

তিনি বলেন, '১৯৯০ সালের সাংগঠনিক কাঠামোয় এই পদগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে সেগুলো বাতিল করা হয়। এ জন্য ক্লিনিকগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English
eid-ul-azha emergency cases at pongu hospital

An Eid evening at Pongu Hospital: overflowing emergency, lingering waits

The hospital, formally known as NITOR, is a 1,000-bed tertiary medical facility that receives referral patients from all over the country

3h ago