মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ত সময়

মাটির তৈরি পণ্যতে চলছে রঙ চড়ানোর কাজ। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

বাড়ির উঠানে তৈরি মাটির তৈজসপত্র শুকানোর জন্য রোদে দিচ্ছেন দীপালি পাল। তাকে সহযোগিতা করছে স্কুলপড়ুয়া ছেলে অঞ্জন পাল। ঈদ আর পয়লা বৈশাখ ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় বসবে মেলা। সেসব মেলায় এসব তৈজসপত্র বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হবে। বছরের এই সময়টাতেই মাটির তৈরি জিনিস বেশি বিক্রি হয়। তাই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তারাও কাজে ব্যস্ত।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হাওর–অধ্যুষিত নিকলী উপজেলা সদরের ষাটধার পালপাড়ার অন্য বাড়িগুলোতেও এমন চিত্র চোখে পড়ল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পাড়ায় ৩০টির মতো পাল পরিবারের বসবাস। বছরভর তারা অপেক্ষা করেন এই সময়টির জন্য। একসময় এ পাড়ার আরও অনেক পরিবার তাদের আদিপেশায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সময় পরিক্রমায় প্লাস্টিকপণ্যের দৌরাত্ম্যে মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় টিকতে না পেরে তারা অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। মন দিয়েছেন অন্য পেশায়।

পাড়ার বাসিন্দা অজিত পালসহ কয়েকজন জানালেন, তৈজসপত্র কিংবা খেলনা বানানোর জন্য মূল যে কাঁচামাল, সেই মাটি পাওয়াই দুষ্কর এখন। এর পাশাপাশি রঙসহ অন্য কাঁচামালের দামও বাড়তি। ফলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ পেশায় আর আগ্রহী হচ্ছে না।

গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, চাকা ঘুরিয়ে কাদামাটি দিয়ে বিশেষ কায়দায় ফুলদানি তৈরি করছেন সঞ্জিত পাল। কল্পনা রানি পালও তৈরি করছেন বাহারি সব জিনিস।

ষাটধার পালপাড়ার বাড়িগুলোতে এখন বিশ্রামের অবকাশ নেই। ছবি: স্টার

কল্পনা বলেন, তৈরি জিনিসপত্রের বেশিরভাগ আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এখন কেবল রঙের কাজ বাকি। রঙ শেষে তা ঠিকঠাক প্যাকেট করাও গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।

সঞ্জিত ও কল্পনা পাল বললেন, মেলায় ভালো বিক্রি হলে পরের দিনগুলো ভালো কাটে। নাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলাটা কঠিন হয়ে যায়।

গোটা পাড়া ঘুরে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীদের কেউ কেউ প্লেট, গ্লাস, মগ, জগ, লবণের বাটি, সানকি, কাপ-পিরিচ ও তরকারির বাটি তৈরি করেছেন। কেউ আবার তৈরি করছেন হাতি, ঘোড়া, গরু, হরিণ, সিংহ, বাঘ, ভালুক, জেব্রা, হাঁস, মুরগি। ছোট শিশুদের জন্য কেউ বানিয়েছেন খেলনা হাঁড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন ধরনের চুলা। নতুন নকশার কয়েলদানি, মোমদানি, ফুলদানি ও বাহারি রঙের মাটির ব্যাংকও তৈরি করেছেন কেউ কেউ।

পরিবারের সবাই হাত লাগাচ্ছে কাজে। ছবি: স্টার

পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা বলেন, মানুষের পছন্দসই পণ্যটিই গড়ার চেষ্টা করেন তারা। যারা দূরের মেলায় যাবেন তাদের অনেকে এর মধ্যে রওনা হয়ে গেছেন। ঈদে অনেক নতুন ঘর সাজানোর জিনিস কেনেন। বৈশাখও বিক্রির একটা ভালো মৌসুম।

খোকন পাল বলেন, ঈদ ও বৈশাখী মেলার বিক্রি থেকে যে মুনাফা হয় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কাঁচামালের দামও বেশি হওয়ায় মুনাফা কমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ পেশায় টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।

বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বংশপরম্পরার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারিভাবে কিছু মৃৎশিল্পীকে সহায়তা করা হচ্ছে। সহযোগিতার পরিসর ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Choking waters: The dangerous decline of oxygen in Dhaka’s peripheral rivers

Bangladesh, often described as a land of rivers, is criss-crossed by more than 230 major and minor waterways.

16h ago