দীপ তৈরিতে ব্যস্ত লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের সহস্রাধিক মৃৎশিল্পী

লালমনিরহাট মৃৎশিল্পী
লালমনিরহাটের মোগলহাট ইউনিয়নের কুমারপাড়ায় দীপ তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দীপাবলি উৎসব আগামী ২৪ অক্টোবর। এ উপলক্ষে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮০ কুমারপাড়ার সহস্রাধিক মৃৎশিল্পী দীপ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্থানীয়ভাবে দীপকে 'ডিয়ার' বলা হয়। দীপাবলিকে ঘিরে একেকজন মৃৎশিল্পী ২০ থেকে ৮০ হাজার 'ডিয়ার' তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছেন।

গত একমাস ধরে তারা 'ডিয়ার' প্রস্তুত শুরু করেছেন। এ বছর তারা তা বিক্রি করে আশানুরূপ আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ২ জেলায় প্রায় ৪ কোটি ডিয়ারের চাহিদা রয়েছে বলে জানান মৃৎশিল্পীরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পী নিতাই চন্দ্র পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৮০ হাজার ডিয়ার তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রায় ৬০ হাজার ডিয়ার প্রস্তুত করেছি। বাকি ২০ হাজার ডিয়ার আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রস্তুত করতে পারবো।'

লালমনিরহাট মৃৎশিল্পী
দীপাবলির দীপ সাজাচ্ছেন লালমনিরহাটের মোগলহাট ইউনিয়নের কুমারপাড়ার এক মৃৎশিল্পী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'পাইকাররা এসে ডিয়ার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগে আমরা প্রতি ১০০ পিস ডিয়ার পাইকারিভাবে ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি করতাম। এ বছর বিক্রি করছি ৯০-১০০ টাকা দরে। স্থানীয় হাট-বাজারে নিজেরাই ১২০-১৪০ টাকা দরে প্রতি ১০০ পিস ডিয়ার খুচরা বিক্রি করছি।'

একই গ্রামের মৃৎশিল্পী জোছনা রানী ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ ধরনের ডিয়ার তৈরি করছি। ভাটাতে আগুনে পুড়িয়ে ও রোদে শুকিয়ে ডিয়ার প্রস্তুত করা হয়। ২ ধরনের ডিয়ারেরই চাহিদা আছে। সেগুলো একই দামে বিক্রি করি।'

'১০০ ডিয়ার প্রস্তুতে আমাদের খরচ পড়ছে ৩৫-৪০ টাকা। এ বছর এর দাম বাড়ানো হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পী নগেন্দ্র নাথ পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর ডিয়ার বিক্রি করে লাভবান হতে পারিনি। এ বছর আশানুরূপ লাভের প্রত্যাশা করছি। কুমারপাড়ার সব মৃৎশিল্পীই ডিয়ার প্রস্তুতে ব্যস্ত।'

'ভাটায় এক সঙ্গে ৩-৫ হাজার ডিয়ার পোড়ানো যায়' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটায় আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আগুন নেভানোর ১২ ঘণ্টা পর ভাটা থেকে ডিয়ার বের করে আনি।'

লালমনিরহাট মৃৎশিল্পী
দীপ বানাচ্ছেন মোগলহাট কুমারপাড়ার এক মৃৎশিল্পী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'মাটি ও খড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিয়ার প্রস্তুতে খরচ বেড়েছে। আগে ১০০ ডিয়ার প্রস্তুত করতে ১৫-২০ টাকা খরচ হতো। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।'

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী সুরেশ চন্দ্র পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিয়ার প্রস্তুত করছি না। তবে, মৃৎশিল্পীদের কাছ থেকে ডিয়ার কিনে খুচরা বিক্রি করছেন। ১০০ ডিয়ার ১২০-১৫০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করি। এখনো ডিয়ার বিক্রি জমে উঠেনি। ৩-৪ দিন পর জমবে।'

লালমনিরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিরালাল রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হিন্দু পরিবার আছে। প্রত্যেক পরিবারই ৩০০-৮০০ পিস ডিয়ার কেনে দীপাবলি উপলক্ষে। সে দিন এসব ডিয়ার জ্বালানো হয়। এ ছাড়াও, হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শ্মশান ও মন্দিরে দীপ প্রজ্বলন করে থাকেন।'

তিনি আরও বলেন, 'দীপাবলি উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ ডিয়ার বা দীপ। এর মাধ্যমে পরলোকগতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সংসারে শান্তির জন্যও দীপ জ্বালানো হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

6h ago