‘খেলোয়াড়দের দক্ষতা আছে, তবে কৌশলগত বোঝাপড়ার অভাব’

৪৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার এশিয়া কাপের জন্য কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ হকি দল। তারা শেষ করলো এএইচএফ কাপের তৃতীয় স্থানে—যে টুর্নামেন্ট তারা গত চারবার জিতেছিল। একসময়ের সহজ প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধেও দলটির নীরস পারফরম্যান্সে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

তবে ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রধান কোচ মামুন উর রশিদ ডেইলি স্টার–এর আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন ব্যর্থতার কারণ নিয়ে—যেখানে ছিল ভুল পরিকল্পনা, দুর্বল কৌশলগত বোঝাপড়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর দ্রুত উন্নতি।

দ্য ডেইলি স্টার: শিরোপা ধরে রাখতে না পারা এবং এএইচএফ কাপে তৃতীয় হওয়ার প্রেক্ষিতে এশিয়া কাপের জন্য কোয়ালিফাই করতে না পারাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মামুন উর রশিদ: অবশ্যই এটা হতাশাজনক ফল। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মানুষ যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে দায়ী করেছে, সেটা অন্যায়। অনেকে একটা খেলোয়াড়—জিমি (রাসেল মাহমুদ)—যিনি বয়সের কারণে দলে ছিলেন না, তাকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারে, জিমি খেললে আমরা জিততাম? ব্যক্তিকে দোষ না দিয়ে সাংবাদিকদের উচিত গভীরভাবে খতিয়ে দেখা—দল কেন কার্যকর হয়নি? সমস্যা কী ছিল? ২০২৩ এশিয়ান গেমসের পর বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেনি—প্রায় দুই বছর প্রতিযোগিতামূলক খেলার বাইরে ছিল দলটি।

ডেইলি স্টার: এর আগেও বাংলাদেশ খুব কম প্রস্তুতি নিয়ে বা অনিয়মিত ঘরোয়া প্রতিযোগিতার মাঝেই এএইচএফ কাপে খেলেছে। এবার মূল ঘাটতিটা কোথায় হলো?

মামুন: শেষ কবে নিয়মমাফিক ঘরোয়া লিগ হয়েছে? এমন ফলাফল অবধারিত ছিল, এবং যদি কিছু না বদলায়, ভবিষ্যতে আরও খারাপ হবে। আমাদের কথিত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো আসলে প্রকৃত পরিকল্পনাই নয়। চাইনিজ তাইপেইকে দেখুন—চার বছর আগেও তারা দুর্বল ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত কোরিয়া, জাপান ও চীনে খেলেছে, প্রস্তুতি নিয়েছে, এবং ফলাফল পেয়েছে। তাদের উন্নতি হঠাৎ আসেনি।

ডেইলি স্টার: এবার প্রতিটি দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশ সংগ্রাম করেছে। এটা আমাদের মানের অবনতি, না প্রতিপক্ষের উন্নতি?

মামুন: আমরা যেখানে আছি, সেখানেই থেমে আছি। আর অন্যরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা এক কদম এগোলে, অন্যরা একশো কদম এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ খারাপ ফল চায় না, কিন্তু এক সময় আমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলতাম—এখন সেই জায়গা থেকেও অনেক দূরে। এখন এসব নিয়ে কথাই হয় না। আমাদের খেলোয়াড়রা ২২ মাস পর মাত্র ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছে। কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল না। সুযোগ-সুবিধাও খুব দুর্বল—খেলোয়াড়রা এখনও দৈনিক মাত্র ৪০০ টাকা ভাতা পায়, যা এক দশক আগেও একই ছিল।

ডেইলি স্টার: দলের রক্ষণভাগ ছিল দুর্বল, এবং গঠনমূলক খেলার ঘাটতিও ছিল, যদিও বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া পর্যায়ে আপনার সাফল্য আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়?

মামুন: কন্ডিশন ছিল কঠিন—৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা। একটা বড় ভুলও আমরা করেছি—শুধু একটি জার্সির সেট এনেছিলাম। খেলোয়াড়েরা ম্যাচ শুরুর আগেই ঘেমে একেবারে ভিজে যাচ্ছিল, বিরতিতে কাপড় পাল্টানোর সুযোগও ছিল না। ফলে ১৫–২০ মিনিটের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। এছাড়া আমার কাছে ছিল মাত্র দুজন ড্র্যাগ-ফ্লিকার—সবুজ (সোহানুর রহমান) ও আশরাফুল (আলম)। তাই রক্ষণভাগে খেলোয়াড় ঘোরানোর সুযোগ কম ছিল, ফলে ক্লান্তি বাড়ছিল।

ডেইলি স্টার: আপনি কি মনে করেন, এই দলের খেলোয়াড়রা আগের প্রজন্মের মতো মানসম্পন্ন নয়?

মামুন: আমাদের সিস্টেম পুরোপুরি বিসিএসপি (বিকেএসপি) থেকে আসা খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীল। তাদের প্রাথমিক দক্ষতা আছে, কিন্তু কৌশলগত বোধ নেই—কখন কোথায় কোন স্কিল ব্যবহার করতে হয়, সেটা বোঝে না। যেমন ওমানের বিপক্ষে আমরা ২-১ গোলে এগিয়ে ছিলাম, কিন্তু একেবারে সহজ এক রক্ষণভাগের ভুল—বল বাইরে না যেতে দেওয়ার কারণে আমরা পেনাল্টি কর্নার খেয়ে গোল খেয়েছি। অনেক খেলোয়াড় 'ফুল প্রেস' বা 'হাফ প্রেস' বলেও কিছু বোঝে না।

ডেইলি স্টার: জুনিয়র দল বিশ্বকাপে খেলছে, কিন্তু সিনিয়ররা এশিয়া কাপে কোয়ালিফাই করতে পারছে না। এটা কী বার্তা দিচ্ছে?

মামুন: এটা মোটেও ভালো বার্তা নয়। ফেডারেশনকে এটা গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে। আমরা যেভাবে উন্নয়ন বলছি, সেটা যথেষ্ট নয়। সবাই শুধু অতীতের দিকে তাকায়, কিন্তু এখন কী করা উচিত সেটা কেউ ভাবে না।

ডেইলি স্টার: এই ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী?

মামুন: সবাই—খেলোয়াড়, কোচ, ফেডারেশন—সবাই দায়ী। মাঠে খেলোয়াড়রা দায়ী, আর আমরা কর্মকর্তা ও কোচিং স্টাফ হিসেবে সাংগঠনিক ব্যর্থতার জন্য দায়ী। এটা সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমি দুঃখিত নই, কারণ ব্যর্থতা প্রক্রিয়ারই অংশ। আমি ১৫–২০ বছর ধরে কোচিং করছি, অনেক সময় স্রোতের বিপরীতে গিয়ে। কেউ বলে আমি এই ক্লাবের লোক, কেউ বলে অন্য ক্লাবের। কিন্তু কেউ বলে না, মামুন হকির লোক। আমি এই ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছি, তবে ভবিষ্যতে ভালো করার জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করবো।

ডেইলি স্টার: এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কী করা প্রয়োজন?

মামুন: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন—শুধু এক মাসের প্রস্তুতিতে হবে না। ফেডারেশনের উচিত এক থেকে দুই বছরের পরিকল্পনা তৈরি করা। ব্যর্থতা শেষ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ার একটি সুযোগ হওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Response to J&K Terror Attack: India gives forces ‘operational freedom’

Indian Prime Minister Narendra Modi has given the country's military "operational freedom" to respond to a deadly attack in Kashmir last week, a senior government source told AFP yesterday, after New Delhi blamed it on arch-rival Pakistan.

3h ago