ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা, কুয়েটে আবারও অচলাবস্থা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) নতুন করে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ৭৪ দিন পর গতকাল রোববার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকরা আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনেও ক্লাসে ফেরেননি।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আজ সোমবার কুয়েট শিক্ষক সমিতি সাধারণ সবার শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছে।

তারা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ও ইউজিসি প্রতিনিধিদের পক্ষপাতমূলক আচরণে তারা ব্যথিত ও মর্মাহত। তারা তীব্রভাবে এর নিন্দা জানান।

সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলা এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ও এরপর ঘটে যাওয়া শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় না আনলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়।

শিক্ষক সমিতি বলছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য যারা হুমকি স্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৫ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।

পাশাপাশি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সাইবার বুলিং, গুজব ছড়ানো বা অপমানমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানান শিক্ষকরা।

চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, 'আমরা দ্রুত ক্লাসের ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এই দাবি পূরণ করা সম্ভব।'

এদিকে কুয়েটের নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বৈঠক করেন। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সরকারের নির্দেশে আমি কুয়েটে এসেছি এবং ইতোমধ্যে যোগদান করেছি। এরপর থেকে সিরিজ মিটিং, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং করেছি। উদ্দেশ্য একটাই যে, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে দ্রুত চালু করা যায়। এটাই এখন প্রধান উদ্দেশ্য।'

আজ ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, '২৩ এপ্রিল শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ইউজিসির প্রতিনিধিদল যে পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছেন, তাতে শিক্ষকরা উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকরা এ ঘটনায় মর্মাহত এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।'

এদিকে দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে পুনরায় ক্ষমা প্রার্থনা ও অবস্থান স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এরপর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালুর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে তাদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে হামলা করেছে।

অপরদিকে ছাত্রদল দাবি করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র শিবির হামলা করেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জন করেন এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ, ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রোভিসি শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দিয়ে গত ২৫ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৪ মে থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security ordinance 2025

Cyber Security Ordinance to be announced this week: law adviser

Nine sections have been scrapped from the Cyber Security Act 2023, he says

1h ago