তেল আবিবের বিমানবন্দরে হুতি হামলার জবাবে ইয়েমেনে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা

ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা বন্দর নগরী হোদেইদার ওপর হামলা চালিয়েছে। এক দিন আগে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবেই এই হামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
বন্দর ও কংক্রিট কারখানায় হামলা
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর অন্তত ২০টি যুদ্ধবিমান সোমবার সন্ধ্যায় ইয়েমেনের উপকূলীয় এলাকায় হুতিদের সামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায়।
ওই হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল হোদেইদা বন্দর ও নিকটবর্তী শহর বাজিলের (ইসরায়েল থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) একটি কংক্রিট কারখানা।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানগুলো থেকে ৫০টি বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হামলার প্রস্তুতির ছবিও প্রকাশ করেছে আইএএফ। যুদ্ধবিমানের সঙ্গে এই অভিযানে তেলবাহী উড়োজাহাজ ও গোয়েন্দা বিমানও অংশ নিয়েছে।
আইডিএফের দাবি, হুতিরা 'সামরিক চাহিদা পূরণ ও জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে ইরান থেকে আসা অস্ত্র' চোরাকারবারের কাজে হোদেইদা বন্দর ব্যবহার করে আসছিল।

আইডিএফ আরও জানায়, বাজিল কংক্রিট কারখানা 'হুতিদের জঙ্গি কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং এখান থেকে উৎপাদিত কংক্রিট ব্যবহার করে সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।'
'এই হামলা হুতিদের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিমত্তার প্রতি বড় আঘাত', যোগ করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।
আইডিএফ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, 'ইসরায়েলি ভূখণ্ড ও এর জনগণের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন হুতির নিরবচ্ছিন্ন ড্রোন ও সারফেস টু সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে এই সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর এটা ছিল ইয়েমেনে ইসরায়েলের ষষ্ঠ হামলা ও জানুয়ারির পর প্রথম হামলা। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরান সমর্থিত হুতির বিরুদ্ধে বড় আকারে বিমান হামলা শুরুর পর ইসরায়েল হুতিদের হামলার জবা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এই হামলার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হয়েছিল। তবে এটা কোনো যৌথ কার্যক্রম ছিল না।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে উভয় অবস্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির নিদর্শন দেখা গেছে।
Some of the first footage from tonight's unilateral strikes by the Israeli Air Force against Hodeidah in Houthi-controlled Western Yemen, which is reported to have heavily targeted a cement factory on the outskirts of the city as well as the Port of Hodeidah. pic.twitter.com/gWDSVCLnsV
— OSINTdefender (@sentdefender) May 5, 2025
হুতিদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কংক্রিট কারখানার হামলায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। তবে নিহতের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ছবিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ ও আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামিরকে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সোমবারের অভিযানের দেখভাল করতে দেখা গেছে। এ সময় তারা তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত আইএএফের ভূগর্ভস্থ সদরদপ্তরে ছিলেন।
পরবর্তীতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল টোমার বার তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি অন্য একটি নিয়ন্ত্রণ পোস্টে ছিলেন।
হুতির বক্তব্য

হুতি গণমাধ্যম কার্যালয়ের প্রধান নাসরুদ্দিন আমের পরবর্তীতে জানান, 'ইসরায়েলি হামলায় হুতিরা দমবে না।'
তিনি এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট আমের বলেন, 'বেসামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে জায়নবাদি ও মার্কিনীদের আগ্রাসী হামলা জায়নবাদি শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের সামরিক অভিযানে কোনো প্রভাব ফেলবে না।'
রোববার ইয়েমেন থেকে ধেয়ে আসা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনালের প্রবেশ পথের একদম কাছে। বিমানবন্দরের মাত্র কয়েক শ গজ দূরে আঘাত হানার পর বিশাল এক গর্ত তৈরি হয়।
এটাই ইসরায়েলের বিমানবন্দরের এত কাছে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রথম ঘটনা। মার্কিন আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাড ও ইসরায়েলের নিজস্ব অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও এই হামলা প্রতিহত করতে পারেনি।
এই হামলায় ছয়জন আহত হন। বিমানবন্দরে বেশ খানিকক্ষণ উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। বেশ কিছু উড়োজাহাজসংস্থা সাময়িকভাবে তেল আবিবের ফ্লাইট বন্ধ রাখে।
হুতিরা এই হামলার দায় নেয় এবং দাবি করে, এতে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে হুতিরা জানায়, তারা 'ইসরায়েলের আকাশসীমা অবরুদ্ধ করে রাখার জন্য বারবার বিমানবন্দরগুলোতে হামলা চালাবে এবং এসব হামলার মূল লক্ষ্য হবে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর।'
ইসরায়েলি হামলার অল্প সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হামলা চালায়। হুতি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম সাবা নিউজ এজেন্সি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র রাজধানীর আরবাঈন সড়কে দুই ও বিমানবন্দর সড়কে এক দফা হামলা চালিয়েছে।
এসব হামলায় ১৬ জন আহত হন। পরবর্তীতে সানায় আরও তিন দফা ও উত্তরাঞ্চলীয় আল-জাউফ গভার্নোরেটে আরও সাত হামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
রোববার বিমানবন্দরে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার হুমকি দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি হুতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরান, উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
তেহরানের বক্তব্য
সোমবার হুতিদের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে তেহরান।
'এটা ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের নিজেদের নেওয়া সিদ্ধান্ত, যা তারা ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের অংশ হিসেবে নিয়েছে', জানায় ইরান।
নেতানিয়াহুর হুমকির জবাবে ইরান হুঁশিয়ারি দেয়, তাদের ভূখণ্ডে যেকোনো হামলার জবাব দেবে তারা।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'ইরান নিজেদের প্রতিরক্ষা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা।'
Comments