আরাকান আর্মির নিপীড়ন বাড়ছে, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন আসছে ৩০-৪০ রোহিঙ্গা

গত রোববার মংডুর সিকদারপাড়া গ্রামে অভিযান চালায় আরাকান আর্মি। তারা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক ধরে খোলা মাঠে নিয়ে যায়, আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে বাড়ি-ঘর তল্লাশি করে। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা দুর্গম ও নজরদারি চালানো কঠিন এমন পথ ব্যবহার করায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। উপরন্তু সীমান্তের দুই পাশের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি দালালরা তাদের টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে পৌঁছে দিতে সহায়তা করছে।

রাখাইনে আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের কারণে সামনের দিনে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করছেন রোহিঙ্গা শিবিরের নেতারা। বর্তমানে রাজ্যটির ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে বাহিনীটি।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মংডুর এক রোহিঙ্গা যুবক এই সংবাদদাতাকে বলেন, 'সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আরাকান আর্মির সামরিক শাখায় জোরপূর্বক নিয়োগ এড়াতে অনেকেই রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা আরাকান আর্মির পাশে থেকে দেশের জন্য লড়াই করতে চাই, তবে তাদের প্রথমে মিয়ানমারে আমাদের নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।'

'আরাকান আর্মির সদস্যরা প্রায়শই আমাদের বাড়িতে অভিযান চালায়, অনেককে আরসা সদস্য আখ্যা দিয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং গ্রামবাসীকে খোলা আকাশের নিচে তাড়িয়ে দেয়। তারা যা পায় তা-ই লুট করে', যোগ করেন ওই রোহিঙ্গা যুবক।

গত রোববার মংডুর সিকদারপাড়া গ্রামে অভিযান চালায় আরাকান আর্মি। তারা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক ধরে খোলা মাঠে নিয়ে যায়, আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে বাড়ি-ঘর তল্লাশি করে, ১০ জনকে আটক করে এবং রোহিঙ্গাদের পাঁচটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। 

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাঁট থেকে স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ থেকেও রোহিঙ্গাদের বাড়ি পুড়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

ওই রোহিঙ্গা যুবক বলেন, 'আরাকান আর্মি আমাদের সরাসরি চলে যেতে বলছে না, তবে তাদের ক্রমাগত দমন-পীড়নে আমরা বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি।'

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছি। নতুন আসা অনেক রোহিঙ্গা এখনো বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছেন। অপেক্ষমাণদের খাদ্য সহায়তা টোকেন দেওয়া হয়েছে।' 

তবে যারা টোকেন নিয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কিছু পুরাতন রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অন্তর্ভুক্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি মোট কত টোকেন বিতরণ করা হয়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।  

নতুন করে আসা রোহিঙ্গারাও আগে থেকে বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালের নৃশংস সামরিক অভিযানের সময় পালিয়ে এসেছিলেন। 

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, 'আরাকান আর্মি পদ্ধতিগতভাবে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে।' 

'প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে আছে এবং তাদের অনেকে পালিয়ে যেতে চান। যারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, আরাকান আর্মি তাদের কাছ থেকে চাঁদাও নেয়। মাঠে যাওয়া, ব্যবসা করা বা গ্রামের বাইরে যাওয়ার জন্য তাদের টোল দিতে হয়', বলেন তিনি। 

এমন নিপীড়ন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে আরেকটি বড় ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেন তিনি। 

টেকনাফে বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, 'নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর বরাবর কঠিন নজরদারি থাকায় রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধভাবে পাচারকারীদের সহায়তায় দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।' 

তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে পাচারকারীরা কৌশল পরিবর্তন করছে, তাই বিজিবিকেও ঘন ঘন প্রতিরোধ কৌশল পরিবর্তন করতে হচ্ছে।' 

সম্প্রতি বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করলে অনেক রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

India launches strikes on Pakistan, Islamabad vows retaliation

Islamabad claims missiles hit civilians, vows retaliation; at least three killed; intense shelling reported at some points along Kashmir border; Trump says he hopes the fighting ‘ends very quickly’

31m ago