নায়ক-গায়কও ছিলেন টেলি সামাদ, আঁকতেন ছবিও

টেলি সামাদ
টেলি সামাদ। ছবি: সংগৃহীত

'মনা পাগলা' সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করে দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছিলেন টেলি সামাদ। এই সিনেমার শেষ দৃশ্যে তাকে প্রতিশোধ নিতে দেখা যায়। সেই দৃশ্যের জন্য ব্যাপক প্রশংসা পান তিনি।

এভাবেই একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। সবার কাছে কৌতুক শিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রকেই রূপদান করেছেন তিনি। নায়ক হিসেবেও দেখা গেছে তাকে। ছিলেন সংগীত পরিচালকও, গায়কও।

টেলি সামাদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। সব ছাপিয়ে অভিনেতা পরিচয়টাই তার বেশি ছিল। মৃত্যুর পরও বিভিন্ন টেলিভিশনে তার অভিনীত সিনেমা দেখানো হয়।

টেলি সামাদ অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন সাদাকালো সিনেমার যুগে। প্রথম অভিনয় করেন কার 'বউ' চলচ্চিত্রে। এটি অবশ্য ১৯৬৬ সালের ঘটনা। পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম।

ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত পরিচালক আজিজুর রহমান পরিচালিত 'দেশ বিদেশ' সিনেমার কথা অনেকের মনে আছে হয়তো। এই সিনেমার শুটিং হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। শাবানা-জসিমসহ একঝাঁক তারকা অভিনয় করেছিলেন এতে। ছিলেন টেলি সামাদও।

'দেশ বিদেশ' সিনেমায় টেলি সামাদের লিপে একটি গান আছে—কেন যে বিদেশে আইলাম বাপরে বাপ। এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ রায়। সেই সময় খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গানটি।

তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—নয়নমনি, গোলাপি এখন ট্রেনে, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, নতুন বউ, রঙিন রূপবান, ভাত দে, নাগরদোলা, সুজন সখী, চাষির মেয়ে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, নেপালি মেয়ে, ফকির মজনু শাহ, তুফান, দিন যায় কথা থাকে, পাগলা রাজা, মিস ললিতা এবং বধূ বিদায়।

টেলি সামাদ নাম নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। একবার তিনি বিটিভিতে গিয়েছেন। সেখানে প্রযোজক ও পরিচালক, ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুনসহ কয়েকজন ছিলেন। ওই দিনই তাকে বলা হয় আব্দুস সামাদ নামের সঙ্গে আজ থেকে 'টেলি' যুক্ত হলো। এরপর আব্দুস সামাদ থেকে তিনি হয়ে যান টেলি সামাদ। এই নামেই পরবর্তীতে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।

অভিনয়জীবনে অনেক সিনেমা তাকে পরিচিত দিয়েছে। তার সহজাত অভিনয় দক্ষতা দর্শকরা পছন্দ করতেন। মানুষকে সহজেই হাসাতে পারতেন। আর পারতেন গান করতে। অবসরে তিনি ছবি আঁকতেন।

'দিলদার আলী' সিনেমায় নায়ক হয়েছিলেন তিনি। সিনেমাটি পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ, নায়িকা ছিলেন জুলিয়া। কমেডি ঘরানার এই সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৮০ সালে।

দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন টেলি সামাদ। ৫০টি সিনেমায় গান করেছেন। 'মনা পাগলা' সিনেমার সংগীত পরিচালকও তিনি। তার গাওয়া কয়েকটি জনপ্রিয় গান—দুনিয়া বানাইয়া, দোস্ত আমার ইস্কাপনের টেক্কা, দিলদার আলী আমার নাম, জুরিয়া প্রাণ খুলিয়া দে...

ছবি: সংগৃহীত

টেলি সামাদ টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। বিটিভির একসময়ের জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'চাচা-ভাতিজা'য় তিনি ভাতিজার চরিত্রে অভিনয় করেন, যা সেই সময় তাকে আলাদা পরিচিতি এনে দেয়। তার অভিনীত সবশেষ সিনেমা 'জিরো ডিগ্রি', যার পরিচালক অনিমেষ আইচ।

প্রযোজক হিসেবেও নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। 'দিলদার আলী' সিনেমায় কেবল নায়ক নন, প্রযোজকও ছিলেন তিনিই।

তার বড় ভাই চারুশিল্পী আব্দুল হাই। তিনিও ঢাকা বিষবিদ্যায়ের চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।

টেলি সামাদের জন্ম বিক্রমপুরে ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল তিনি মারা যান।

পাঁচ শতাধিক সিনেমার এই জনপ্রিয় একজন অভিনেতার ভাগ্যে জোটেনি কোনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

Comments

The Daily Star  | English

Gazipur Police Commissioner Nazmul Karim withdrawn

He was withdrawn in the face of a controversy over closing one lane of a highway while travelling from Dhaka to his workplace

3h ago