টাইপ-১ ডায়াবেটিস বিষয়ে কতটা জানেন, টাইপ-২ এর সঙ্গে পার্থক্য কী

টাইপ-১ ডায়াবেটিস
ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত অথচ সে বিষয়ে অবহিত নন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। ডায়াবেটিস বলতে একটি রোগের কথাই সবাই বুঝলেও এর আছে ধরন। এরকম একটি ধরন হলো টাইপ-১ ডায়াবেটিস।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস কী এবং টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য কী সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড নিউট্রিশনিস্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপু।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস কী ও কেন হয়

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ফলে রক্তে স্বাভাবিক সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয় এবং এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হয়।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস কেন হয় তার নির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সাধারণত জেনেটিক প্রবণতা ও পরিবেশগত কারণের সম্মেলিত ফল হিসেবে এই রোগ হতে পারে। কিছু ভাইরাস সংক্রমণ বা অজানা কোনো কারণে ট্রিগার হয়ে শরীরে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া শুরু করতে পারে, যার ফলে শরীরের অন্যান্য কিছু রোগের পাশাপাশি অগ্ন্যাশয় এর ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস হয়।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ

টাইপ-১ ডায়াবেটিস হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-

১.  অতিরিক্ত পিপাসা

২.   ঘন ঘন প্রস্রাব

৩.  অতিরিক্ত ক্ষুধা

৪.    হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

৫.   দুর্বলতা ও ক্লান্তি

৬.  দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া

৭.   ছোটদের ক্ষেত্রে বিছানায় প্রস্রাব

চিকিৎসা

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রতিদিন ইনসুলিন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কারণ শরীর নিজে থেকে কোনো ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। সেজন্য মূলত চিকিৎসা করার একমাত্র উপায় ইনসুলিন ব্যবহার করা। বিভিন্নভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে, যেমন- ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প ব্যবহার করা হয়।

নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু কাজ নিয়মমাফিক করা উচিত। যেমন- নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা, সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ডায়াবেটিস শিক্ষার মাধ্যমে এই রোগের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা।

প্রতিরোধের উপায়

দুর্ভাগ্যবশত, টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের নির্দিষ্ট কোনো উপায় এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। যেহেতু এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার বা আত্মপ্রতিরোধী রোগ, তাই সচেতনতা ও প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করাই এই রোগ মোকাবেলার মূল কৌশল। তবে এই বিষয়ে গবেষণা চলছে, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিরোধের উপায় বের করা সম্ভব হয়।

ডায়াবেটিস টাইপ-২ এর সঙ্গে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের কী পার্থক্য

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পার্থক্য আছে। যেমন-

১. টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সে দেখা যায়। অন্যদিকে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। তবে এখন তরুণদের মধ্যেও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

২. টাইপ-১ একটি স্বয়ংপ্রতিরোধী (অটোইমিউন) রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরিকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না।

অপরদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও তা ঠিকভাবে কাজ করে না, অর্থাৎ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। এতে শুরুতে কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে এবং ধীরে ধীরে রোগটি বৃদ্ধি পায়।

৩. টাইপ-১ ডায়াবেটিস হঠাৎ করে শুরু হয় এবং খুব দ্রুত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকাংশে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও, পরে ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

3 killed in Iranian missile strike on southern Israel, says MDA

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

2d ago