গানের খালামণির জন্মদিন

গানের খালামণির জন্মদিন আজ। ৮৪ বছর পার করে ৮৫ বছরে বয়সে পা রাখলেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী। সবার প্রিয় গানের খালামণি হলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি), শিশুতোষ অনুষ্ঠান 'এসো গান শিখি' অনুষ্ঠানের কারণে সবার কাছে 'খালামণি' হিসেবে পরিচিত তিনি। কয়েক প্রজন্মের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শিক্ষামূলক গানের অনুষ্ঠানটির সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে ২৭ ডিসেম্বর 'এসো গান শিখি' গানের অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন ফেরদৌসী রহমান। সংগীতপ্রিয় মানুষের কাছে আজন্ম প্রিয়নাম হয়ে আছেন।
ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন ঘিরে আজ অনন্য রুমা প্রযোজিত 'বিশেষ তারকা কথন' অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন 'এসো গান শিখি' অনুষ্ঠানের প্রযোজক মেনোকা হাসান ও এই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সানজিদা। আয়োজনে ফেরদৌসী রহমানের সংগীতসহ ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান ১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম থেকেই গানের সঙ্গে সখ্য তার। সংগীতে হাতেখড়ি হয় বাবা পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের কাছেই। পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমুখ সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন। খুব অল্প বয়স থেকে তার স্টেজ পারফরম্যান্স শুরু হয়।
মাত্র আট বছর বয়সে ১৯৪৮ সালে রেডিওতে 'খেলাঘর' নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তখন তিনি রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। ১৯৫৬ সালে বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। বিয়ের পরই ফেরদৌসী বেগম থেকে তিনি হলেন ফেরদৌসী রহমান। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন রেজাউর রহমানকে। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাদের দুই ছেলে রুবাইয়াত ও রাজিন।
১৯৬০ সালে 'আসিয়া' চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন ফেরদৌসী রহমান। এই ছবি মুক্তির আগে অবশ্য মুক্তি পায় 'এ দেশ তোমার আমার' ছবিটি। এ ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন—'চুপিসারে এত করে কামিনী ডাকে'। সৈয়দ শামসুল হকের কথায় 'আয়না এবং অবশিষ্ট' চলচ্চিত্রে গাইলেন 'যার ছায়া পড়েছে, মনের আয়নাতে, সেকি তুমি নও ওগো তুমি নও সত্যিই তাই'। এরপর 'সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই', 'গান হয়ে এলে', 'যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে', 'আমি কার জন্য পথ চেয়ে রব', 'মনে যে লাগে এতো রঙ ও রঙিলা', 'নিশি জাগা চাঁদ হাসে কাঁদে আমার মন', 'আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের যাদু এনেছি', 'এই সুন্দর পৃথিবীতে আমি এসেছিনু নিতে', 'এই রাত বলে ওগো তুমি আমার', 'বিধি বইসা বুঝি নিরালে', 'এই যে নিঝুম রাত ঐ যে মায়াবী চাঁদ', 'মনে হলো যেন এই নিশি লগনে', 'ঝরা বকুলের সাথী আমি সাথী হারা', 'আমার প্রাণের ব্যথা কে বুঝবে সই', 'যে জন প্রেমের ভাব জানে না', ওকি গাড়িয়াল ভাই', 'পদ্মার ঢেউরে'সহ অনেক দর্শকপ্রিয় গান তিনি দিয়েছেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পী সিনেমার গানে সরব ছিলেন। আড়াইশর কাছাকাছি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনিই গান করেন। 'ওই যে আকাশ নীল হলো আজ সে শুধু তোমার প্রেম'—গানটি ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম গান।
১৯৬০ সালে ফেরদৌসী রহমান ইউনেস্কো ফেলোশিপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ছয় মাসের সংগীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। সুরকার হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬১ সালে 'রাজধানীর বুকে' সিনেমার মাধ্যমে। ওই সিনেমায় ফেরদৌসী রহমানের সঙ্গে রবীন ঘোষও সুরকার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ফেরদৌসী রহমান 'মেঘের অনেক রং', 'গাড়িয়াল ভাই' ও 'নোলক' ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
সাত দশকের সংগীতজীবনে সব ধরনের গানই গেয়েছেন ফেরদৌসী রহমান। তিনটি লং প্লেসহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং প্রায় ২০টি গানের ক্যাসেট বের হয়েছে তার। মাত্র একটি সিডি প্রকাশ হয়েছে 'এসো আমার দরদী'। বাংলা ছাড়াও গেয়েছেন উর্দু, ফারসি, আরবিসহ কয়েকটি ভাষার গান গেয়েছেন তিনি।
Comments