কেন ইলন মাস্ককে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠাতে চান ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবার চরম আকার ধারণ করেছে। ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত বিলকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই বিরোধ এখন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ট্রাম্পের 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল' নামের একটি আইন প্রস্তাবকে ঘিরে। এই বিলে ধনীদের কর ছাড়ের সুবিধার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপুল পরিমাণে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে উত্তরণের মতো খাতে সরকারি ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ইলেক্ট্রিক গাড়ির কোম্পানি টেসলা ও নাসার সবচেয়ে বড় বেসরকারি কনট্রাক্টর স্পেস এক্স ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ট্রাম্পের একসময়ের মিত্র ইলন মাস্ক এই বিলকে 'জঘন্য ও বীভৎস' বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি অভিযোগ করেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের বোঝা আগামী দশকে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দেবে। বিলটির সমর্থনে ভোট দিলে রিপাবলিকান দলের বিরুদ্ধে নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করার হুমকিও দেন তিনি।

এর জবাবে ট্রাম্প পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, মাস্কের বিরোধিতার আসল কারণ ভিন্ন। এই বিলে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ওপর সাড়ে সাত হাজার ডলারের যে কর ছাড় দেওয়া হতো, তা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেহেতু মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলা এই ছাড়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, তাই ব্যক্তিগত স্বার্থেই মাস্ক বিলটির বিরোধিতা করছেন। তবে মাস্ক এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কর ছাড়ের চেয়ে দেশের আর্থিক ভবিষ্যতের প্রশ্নটি অনেক বড়।

এই বিতর্কের মধ্যেই গত ১ জুলাই, মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, 'মাস্ককে হয়তো তার নিজের দেশে ফিরে যেতে হতে পারে।' এই হুমকির পরই মাস্কের মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

মাস্ককে দেশছাড়া করা কি আদৌ সম্ভব?

ইলন মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় হলেও তিনি ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি ১৭ বছর বয়সে কানাডায় পড়াশোনার জন্য যান এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি অর্জন করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন তিনি। পরে আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান তিনি।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন আইনসিদ্ধ মার্কিন নাগরিককে দেশছাড়া করা প্রায় অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা অত্যন্ত বিরল। যুদ্ধাপরাধী বা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই কেবল এটা ঘটতে পারে। কিন্তু মাস্কের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা নাগরিকত্বের আবেদনে জালিয়াতির কোনো প্রমাণ নেই। তাই ট্রাম্পের এই হুমকিকে রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্প ও মাস্কের এই বিরোধের সূত্রপাত হয় মে মাসে 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি' থেকে পদত্যাগ করার পর। এরপর মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। বিতর্কিত ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগের অভিযোগও তোলেন তিনি। উল্লেখ্য, শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন জেফরি এপস্টেইন।

গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে ২৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। পুরস্কার হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরই ইলন মাস্ককে 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি' বা সংক্ষেপে 'ডজ'-এর দায়িত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার জন্য মাস্ক যেসব পদক্ষেপ নেন তার মধ্যে ছিল ব্যাপক হারে ফেডারেল কর্মচারী ছাঁটাই এবং বিভিন্ন জনপ্রিয় কর্মসূচিতে কাটছাঁট। আর এর জন্য মাস্ককে অপ্রীতিকর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্বজুড়ে বয়কটের মুখে পড়ে টেসলা। পরে 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল'-এর বিরোধিতা করে ডজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু করেন মাস্ক।

ট্রাম্প-মাস্কে এই বাগযুদ্ধের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। দ্রুত কমে গেছে টেসলার শেয়ারের দাম। এই দ্বৈরথ মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh to clear rooppur dues

Govt moves to clear Rooppur dues to Russia after US waiver

Central bank seeks nod from Washington after Russia's reply

11h ago