বন্ধুকে বাঁচাতে শুল্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প

জাইর বলসোনারো ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টার অভিযোগে বিচার চলছে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর। এই বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের রাজনৈতিক মিত্রকে বাঁচাতে এখন বাণিজ্য-শুল্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি।

লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পর ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বলসোনারোর সমর্থকেরা ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বলসোনারোসহ আরও ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তার বন্ধুর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এই মামলাকে 'উইচ হান্ট' বা 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই বিচার 'অবিলম্বে শেষ হওয়া উচিত'। আর এই দাবি আদায়ে তিনি ব্রাজিলের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

বলসোনারো ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এখন সেই বন্ধুকে আইনি বিপদ থেকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল প্রভাবকে ব্যবহার করে ব্রাজিলকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছেন ট্রাম্প।

ক্যাপিটল হিলের ছায়া ব্রাসিলিয়ায়

ব্রাজিলে বলসোনারোর সমর্থকদের হামলার ঠিক দুই বছর আগে একই কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্প-সমর্থকরা। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে দুই নেতাই তাদের সমর্থকদের উসকে দিয়েছিলেন। এখন সেই ঘটনার বিচার থেকে বন্ধুকে বাঁচাতে ব্রাজিলের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প।

বলসোনারো ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এখন সেই বন্ধুকে আইনি বিপদ থেকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল প্রভাবকে ব্যবহার করে ব্রাজিলকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস ব্রাজিল থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন যে, রাজনৈতিক মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি যেকোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম ভাঙতে প্রস্তুত।

শুল্ক আরোপের পেছনে বাণিজ্য ঘাটতিকে অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। তার যুক্তি অনুযায়ী, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পণ্য রপ্তানি করে কিন্তু সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম আমদানি করে সেসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন। তার মতে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবে অন্তত ব্রাজিলের ক্ষেত্রে এই যুক্তি একেবারেই খাটে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপরীতে, ব্রাজিলে রপ্তানি করেছে ৪৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

সোজা হিসাবে, ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি তো নেই-ই, বরং ওয়াশিংটনের প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই শুল্ক আরোপের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো, অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে একটি সার্বভৌম দেশের বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা এবং নিজের রাজনৈতিক মিত্রকে সুবিধা দেওয়া।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য শুল্ককে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তিনি মেক্সিকো থেকে অভিবাসীদের আসা ঠেকাতে দেশটির ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। চীনের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য তিনি ফেন্টানিলের মতো মাদক পাচারকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করেছিলেন।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর একটি বড় আঘাত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিশ্ববাণিজ্যের এই নিয়ম গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও। এই সংস্থাটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল শুল্কের মতো বিষয়কে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প সেই নীতির গোড়াতেই কুঠারাঘাত করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Why was July 2025 wetter in Bangladesh?

Bangladesh experienced three low-pressure systems on July 7, July 14 and July 24 which led to heavy rain

25m ago