পালমারের নৈপুণ্যে পিএসজিকে উড়িয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন চেলসি

কাগজে-কলমে হট ফেভারিটের তকমা ছিল দারুণ ছন্দে থাকা পিএসজির গায়ে। কিন্তু মাঠের ভেতরের লড়াইয়ে সব হিসাব-নিকাশ পুরোপুরি উল্টে গেল। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাধারীদের টেনে মাটিতে নামাল চেলসি। কোল পালমারের অসাধারণ নৈপুণ্যে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো ব্লুজরা।
বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনালে পিএসজিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে চেলসি। ৮২ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে সবগুলো গোলই আসে ম্যাচের প্রথমার্ধে। বড় মঞ্চে জ্বলে উঠে জোড়া লক্ষ্যভেদ করেন ইংলিশ উইঙ্গার পালমার। পরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রোর গোলও আসে তার অ্যাসিস্ট থেকে।
এবারই প্রথম ৩২টি ক্লাব নিয়ে নতুন ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হলো ক্লাব বিশ্বকাপ। সেখানে বাজিমাত করা ইংলিশ ক্লাব চেলসিকে শুরুতে ফেভারিটদের তালিকায় রেখেছিলেন কম লোকই। প্রতিযোগিতায় এটি তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটি।
ফরাসি ক্লাব পিএসজি ফাইনালে পৌঁছেছিল দাপট দেখিয়ে। আগের চার ম্যাচে ১২ গোল করার বিপরীতে নিজেদের জাল অক্ষত রেখেছিল তারা। এর মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ গোলে হারানোর পর সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পার্ক দে প্রিন্সেসের দলটি। কিন্তু মূল লড়াইয়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল তারা।
মাত্র ৩৪ শতাংশ সময় বল দখলে রাখলেও আক্রমণে দাপট ছিল চেলসির। গোলমুখে ১০টি শট নিয়ে এঞ্জো মারেস্কার শিষ্যরা লক্ষ্যে রাখে পাঁচটি। অন্যদিকে, প্রথমার্ধে বিবর্ণ থাকা পিএসজি দ্বিতীয়ার্ধ গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেও কাজ হয়নি। গোলপোস্টে লুইস এনরিকের শিষ্যদের আটটি শটের ছয়টি লক্ষ্যে থাকলেও গোল মেলেনি।
এর পেছনে মূল ভূমিকা চেলসির স্প্যানিশ গোলরক্ষক রবার্ত সানচেজের। নিজেকে মেলে ধরে ছয়টি শটের সবকটিই রুখে দেন তিনি। কয়েকটি আবার ছিল বিশ্বমানের সেভ।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শুরু হওয়া ম্যাচের লাগাম চেলসি নিয়ে ফেলে ২২তম মিনিটে। গোলরক্ষকের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফরাসি ডিফেন্ডার মালো গুস্তো। তার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণে বাধা পাওয়ার পর তিনি খুঁজে নেন পালমারকে। বাঁ পায়ের গড়ানো শটে জাল কাঁপান তিনি।
আট মিনিট পর নজরকাড়া লক্ষ্যভেদে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমার। নিজেদের অর্ধ থেকে ইংলিশ ডিফেন্ডার লেভি কলউইলের উঁচু করে দেওয়া পাস ধরে দ্রুত ছুটে ডি-বক্সে পৌঁছে যান তিনি। প্রথমে শট নেওয়ার ভঙ্গি করলেও না নিয়ে জায়গা বানান তিনি। এরপর ফের বাঁ পায়ের নিচু শটে পেয়ে যান গোলের দেখা।
ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলে চেলসি। দুটি গোল করা পালমার এবার ছিলেন সহায়তাকারীর ভূমিকায়। ডি-বক্সে তার রক্ষণচেরা পাসে প্রথম ছোঁয়ায় পিএসজির ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠান পেদ্রো।
পিএসজি পুরো ১১ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে পারেনি। ৮৫তম মিনিটে তারা পরিণত হয় ১০ জনের দলে। পেছন থেকে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার চুল টেনে ধরেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। কিছুক্ষণ পর শেষ বাঁশি বেজে উঠলে শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে চেলসি।
যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দৃশ্যের দেখা মেলে খেলা শেষের পর। দুই দলের কয়েকজন ফুটবলার জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। জটলার মধ্যে অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে বসেন পিএসজির কোচ এনরিকে। তিনি মুখে আঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পেদ্রো।
২০২৪-২৫ মৌসুমে চেলসি শেষ করল দুটি শিরোপা নিয়ে। ক্লাব বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার আগে তারা জিতেছে উয়েফা কনফারেন্স লিগের ট্রফি। এছাড়া, এফএ কাপ ও ইএফএল কাপের চতুর্থ রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া দলটি প্রিমিয়ার লিগ পেয়েছে চতুর্থ স্থান।
Comments