রংপুরে হামলার জেরে আতঙ্কে হিন্দু পরিবার, যা বলছে পুলিশ-প্রশাসন

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর গ্রামে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনায় আতঙ্কে দিন পার করছেন সেখানকার হিন্দু পরিবারগুলো।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১২টি বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, হামলা চালানো হয়েছে অন্তত ২০টি বাড়িতে। অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, ১৫টি বাড়িতে হামলা হয়েছে।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল ইমরান জানান, আরও সহিংসতা রোধে এলাকায় সেনা সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রামের বাসিন্দা এবং রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জানান, ফেসবুক পোস্টের খবরে শনিবার দুপুর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

শনিবার রাত ১০টার দিকে একটি দল ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায় বলে জানান তিনি।

খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে আটক করে। পরে উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ তার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

অভিযুক্তকে রোববার আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওসি আরও বলেন, রোববার দুপুরের দিকে কয়েকশ মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে তাদের অনেকেই হিন্দু পাড়ার দিকে মিছিল করে গিয়ে আরও কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করেন।

তাদের মধ্যে অনেকে পুলিশের প্রতিরোধে মুখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

অভিযুক্তের বাবা রোববার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় দাবি করেন যে তার ছেলে এমন কোনো পোস্ট আপলোড করেনি। 'বরং, কেউ হয়তো ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এটি করেছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র।'

এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, রোববার বিকেলে তার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

'তারা আমার দুটি গরু এবং নগদ টাকা নিয়ে গেছে। চেয়ার, টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেছে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি। পরিবারের দুই জন নারী এবং তিন শিশুসন্তানকে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।

এলাকার আরেক বাসিন্দা সুবল চন্দ্র রায় বলেন, 'আমার একটা গরু এবং একটা ছাগল নিয়ে গেছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আক্রমণকারীরা তাদের ওপরও হামলা করেছে।

'আমি এখন বাড়িতে একাই আছি। পরিবারের বাকি সদস্যদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি,' বলেন তিনি।

গতকাল ডেইলি স্টার কমপক্ষে ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে যাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পরেশ চন্দ্র বলেন, হামলাকারীরা প্রায় ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং চারটি গরু, ছয়টি ছাগল, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার এবং ফসল লুট করে নিয়ে গেছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৫টি বাড়িতে হামলা হয়েছে। 'আমরা, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল ইমরান বলেন, 'পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।'

হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য

হামলার ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ২২টি পরিবারের মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে তাদের বাড়িতেই আছে বলে জানানো হয়েছে। কটুক্তির অভিযোগে আটককৃত এবং তার চাচার পরিবারসহ মোট ৩টি পরিবার পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়। 

জেলা প্রশাসক বলেন, আজ থেকেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বাড়িঘর মেরামত করার কাজ শুরু করা হবে। পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি জানান, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত আছে।

রংপুরের পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম জানান, হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলার ঘটনায় ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাড়িগুলোতে ২২টি পরিবার বসবাস করত।

তিনি জানান, অভিযুক্তকে আটক হওয়ার পর থেকেই তার বাবা, দাদা এবং চাচার পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আছেন। অন্যান্য ১৯টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তাদের বাড়িতেই আছেন। ঘরবাড়ি ভাঙা থাকায় কিছু নারী সদস্য মালামাল নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

স্থানীয় নেতারাও এলাকায় সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত হলে নারী সদস্যসহ সবাই বাড়িতে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

হামলার ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Sada Pathor Looting: Admin officials, law enforcers involved

Some government officials  including members of law enforcement agencies were involved in the rampant looting of stones from Bholaganj’s Sada Pathor area, found a probe committee of the Sylhet district administration.

2h ago