বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলল দিল্লি পুলিশ, প্রতিবাদ মমতার

মমতা বন্দোপাধ্যয়। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' হিসেবে উল্লেখ করায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনাকে 'কলঙ্কজনক' ও 'অপমানকর' আখ্যা দিয়ে গতকাল রোববার তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন।

বিতর্কের শুরু গত ২৯ জুলাই দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অফিশিয়াল গেস্ট হাউজ বঙ্গভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠানো ওই চিঠিতে কিছু নথি অনুবাদের জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ওই নথিগুলো 'বাংলাদেশি ভাষায়' লেখা।

আটজন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি এফআইআর-এর তদন্তের অংশ হিসেবে এই চিঠিটি পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা কলঙ্কজনক, অপমানকর, দেশবিরোধী এবং অসাংবিধানিক কাজ। এটি ভারতের সব বাংলাভাষী মানুষকে অপমান করে। তারা আমাদেরকে হেয় করে (চিঠিতে) এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারে না।'

মমতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'বাঙালি-বিরোধী ভারত সরকারের' বিরুদ্ধে অবিলম্বে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'যারা ভারতের বাংলাভাষী মানুষদের অপমান করার জন্য অসাংবিধানিক ভাষা ব্যবহার করছে', তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জরুরি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ভারতের 'জাতীয় সংগীত ও জাতীয় স্তোত্র (রাষ্ট্রগান) দুটোই বাংলায় লেখা।' কোটি কোটি ভারতীয় যে ভাষায় কথা বলেন এবং লেখেন, যা ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত, তাকেই এখন বাংলাদেশি ভাষা বলা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজের খোঁজে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে যাওয়া শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ বেশ পুরোনো। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত 'ভাষা আন্দোলন' চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছে।

তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটি 'কোনো করণিক ভুল নয়', বরং 'বাংলাকে হেয় করতে, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ক্ষুণ্ণ করতে এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক প্রচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে এক করে দেখানোর জন্য বিজেপির আরেকটি পরিকল্পিত চক্রান্ত।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাকে বিদেশি ভাষা বলা শুধু অপমানই নয়—এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের ওপর আক্রমণ। বাঙালিরা নিজের ভূমিতে বহিরাগত নয়।'

অভিষেক এই ঘটনার জন্য অবিলম্বে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা অমিত দত্তকে বরখাস্ত এবং দিল্লি পুলিশ, বিজেপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অভিযোগ তুলে বলেছেন, পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে অথচ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। সব অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের দেশের আইন অনুযায়ী কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার পথে কোনো রাজনৈতিক নাটক বা ভোটব্যাংকের রাজনীতি বাধা হতে পারবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser calls for urgent reforms in social services to prioritise senior citizens, girls

Political interference led to unfair distribution of benefits in the past, he says

29m ago