জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ৩২ মাসে সর্বোচ্চ

প্রতীকী ছবি | রয়টার্স

জুলাইয়ে দেশের রপ্তানি বেড়ে হয়েছে চার দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তিন দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, ২০২২ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।

নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। হিমায়িত মাছ, শাক-সবজি ও তামাক রপ্তানি বেড়েছে। কমেছে চা ও কাচের পাত্র রপ্তানি।

গত চার বছরে ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ায় গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেড়ে যাওয়া কথা বাংলাদেশ ব্যাংক জানানোর একদিন পর ইপিবি মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের এই তথ্য প্রকাশ করল।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ কমেছে। গত তিন বছরের ঘাটতির পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক লেনদেনে উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ মনে করেন, এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বিদেশে বেশি চাহিদার কারণে হয়নি। এটি হয়েছে, মার্কিন শুল্ক হার ও অন্যান্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে ব্যবসায়ীদের তাড়াহুড়ো করায়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। অনেক কারখানা পুরোপুরি কাজ করতে পারছিল না। এ বছর পণ্য উৎপাদনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাই মাসভিত্তিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।'

জুলাইয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক মনে হলেও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন পারভেজ। তিনি বলেন, 'মার্কিন ও ইউরোপীয় ক্রেতারা এখনো দ্বিধায় আছেন। কেউ কেউ আগস্টের শুরু পর্যন্ত কার্যাদেশ আটকে রেখেছিলেন।'

তার শঙ্কা, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমতে পারে। 'অক্টোবর থেকে পরিস্থিতির আবার উন্নতি হওয়া উচিত,' বলেও মনে করেন তিনি।

বিসিআই সভাপতি আরও বলেন, 'যদি একটি পণ্যের খুচরা দাম দুই থেকে তিন ডলার বেড়ে যায়, তাহলে ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।'

বর্তমানে বেশিরভাগ পণ্য আসন্ন শীতকে সামনে রেখে রপ্তানি হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব পণ্য রপ্তানি চলবে। আগামী বড়দিন ও পরবর্তী গ্রীষ্মের পণ্যের রপ্তানি চালান সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, 'অনেক কার্যাদেশ চূড়ান্ত করতে দেরি হয়েছে। এই সপ্তাহটি গুরুত্বপূর্ণ। পুরোপুরি পরিষ্কার ধারণা পেতে আরও তিন থেকে চার মাস লাগতে পারে।'

'জুলাইয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ার পেছনে বৈশ্বিক ও দেশি কারণ আছে,' বলে মনে করেন নিউএজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্র্যান্ড তাদের আমদানি বাড়িয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাইয়ে প্রচুর কার্যাদেশ দিয়েছে।'

তার ভাষ্য, বিশেষ করে চীনকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্বব্যাপী পণ্য সংগ্রহের কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। ক্রেতারা বৈচিত্র্যের দিকে নজর দেওয়ায় বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো প্রচলিত বাজারে পণ্যের চাহিদা অনেক। তবে জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে পণ্য রপ্তানি দ্রুত বেড়েছে।

ওষুধ রপ্তানিতে হয়েছে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে ১৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে তা ছিল ১২ মিলিয়ন ডলার।

তবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আন্তর্জাতিক বিপণন ব্যবস্থাপক ওয়াসিম হায়দার মনে করেন, সম্ভবত একাধিক 'বাড়তি' তথ্যের কারণে এই প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

জুনের তথ্য দেরিতে আসা ও নতুন পণ্য অনুমোদনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুলাইয়ের এমন প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক।'

জুলাইয়ে চামড়ার জুতা রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। তবে জেনিস সুজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেরি-দুর্নীতি না হলে প্রবৃদ্ধি আরও অনেক বেশি হতো।'

তার মতে, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও দেশে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, মধ্যস্বত্বভোগী ও 'গ্রিজ মানি' এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
banks loss in stock market Bangladesh

31 banks lost Tk 3,600cr in stock rout last year

Thirty-one banks suffered combined losses of Tk 3,600 crore from their stock market investments last year, largely because of poor decisions, misuse of funds and a sluggish market..State-owned banks were hit the hardest, while private commercial banks also reported losses despite being kno

11h ago